
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন প্রস্তুতি, নিরপেক্ষতা, আইনি বাধা, প্রতীক বিতর্কসহ নানা বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিইসি বলেন, নির্বাচন কবে হবে তা এখনো তার জানা নেই। তিনি জানান, সরকার এখনো নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানায়নি। তবে তিনি মনে করছেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতে বা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে এসব সময়ের কথাই বলেছিলেন।
সিইসি বলেন, আমি যেমন জানি, আপনারাও তেমনি জানেন- হয়তো রমজানের আগে ফেব্রুয়ারিতে বা এপ্রিলের প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে। তিনি জানান, ‘ইসি ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে প্রথম থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছিল।’ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, তিনি নিজের উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি এ সাক্ষাৎকে ‘এজেন্ডাবিহীন’ সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা ব্রিফ দিয়েছেন এবং ইসির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
সিইসি বলেন, আমি সময় চেয়েছিলাম। উনি উপযুক্ত সময় দিয়েছেন। আমি বিস্তারিত বলেছি আমরা কী করছি, কী করেছি, কী বাকি আছে।
বেশকিছু রাজনৈতিক দল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে দাবি করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই অবস্থান নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব।’
তার কথায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উন্নতি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। জনগণ যদি আমাদের সঙ্গে থাকে, তাহলে মব বা সহিংসতা কোনো বাধা হবে না।
তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের অন্য বাহিনীর প্রস্তুতিও চলছে এবং ইসিও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো সংশয়ের জায়গা নেই বলে জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি। আমাদের কাজই হবে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া। আমি নিজেকে বিচারকের মতো দায়িত্বশীল ভাবি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল আমাদের নিয়ে নানা অভিযোগ তুলছে। এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। সময় গেলে তারা বুঝবে যে ইসি নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। তাই আমরা তাদের নিবন্ধনও স্থগিত করেছি। বিচার শেষে যদি তারা দোষী না হয়, তখন বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু এখন তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোনো বড় রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তাহলে নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হবে সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে তার মতে, অংশগ্রহণমূলক মানে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।’
জামায়াতে ইসলামীর আগের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল কোর্টের রায়ে। সেই রায় স্ট্যাটাস কু হয়ে যাওয়ায় নিবন্ধন ও প্রতীক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিরে এসেছে।
জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ প্রতীক হিসেবে ব্যবহার নিয়ে এনসিপি ও নাগরিক ঐক্যের দাবি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘শাপলা প্রতীক আমরা কাউকেই দেবো না। যেহেতু এটি জাতীয় প্রতীক এবং আইনি জটিলতা আছে, তাই কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাপলা প্রতীক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
সিইসি জানান, প্রায় দেড়শ’ রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। তিনি বলেন, অনেকের সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। যাচাই-বাছাই শুরু হয়ে গেছে। ফিল্ড অফিসগুলো এই কাজ করছে। প্রয়োজন হলে দলগুলোকে ডকুমেন্টস জমা দিতে ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। যারা আইন অনুযায়ী শর্ত পূরণ করবে, কেবল তারাই নিবন্ধন পাবে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক সহিংসতা হয়। এগুলো ধাপে ধাপে করতে হয় এবং সময়ও বেশি লাগে। এখন আমাদের সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই আমরা স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এই দায়িত্বকে আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি চাই দেশের এই সংকটময় সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে। আমি যেভাবে হাসিমুখে দায়িত্ব নিয়েছি, তেমনি হাসিমুখে এই দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে চাই।