
.
বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা মহানগরের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। রোববার সকালে চালকেরা সেখানে অবস্থান নেন। তাদের অবরোধের কারণে ওই সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সড়ক অবরোধকারী চালকেরা বলছেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার রুট নির্ধারণের দাবিতে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। কাফনের কাপড় পরে অনেক সিএনজিচালককে অবরোধে অংশ নিতে দেখা যায়।
বর্বর হত্যাকান্ড
প্রতিটি মানব হত্যা মানেই মানুষ নিহত হওয়া, প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়া। ঘাতক বা আততায়ীর আঘাতে প্রতিটি অপমৃত্যুর ঘটনাই অগ্রহণযোগ্য ও সমাজের জন্য মন্দ দৃষ্টান্ত, আর বেদনাদায়ক বাস্তবতা। তবু কিছু কিছু হত্যাকান্ড গোটা সমাজকে বিপুলভাবে নাড়িয়ে দিয়ে যায় তার ব্যতিক্রমী নৃশংসতার কারণেই। গণপিটুনিতে হত্যা দেখতে দেখতে যে সমাজের চোখ সয়ে গেছে, সেই মোটা চামড়ার সমাজেও তরঙ্গ ওঠে, বহু মানুষ বিমর্ষ হয়, ক্ষোভে ফেটে পড়ে, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ মিছিল করে। এমনই একটি বর্বর হত্যাকান্ডের কলঙ্ক তিলক পড়ল ঢাকা তথা বাংলাদেশেরই গায়ে। আমি পিটিয়ে, কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে থেঁতলে পুরান ঢাকার লাল চাঁদ সোহাগ হত্যাকান্ডের কথাই বলছি।
গত বুধবার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত পাষণ্ড সোহাগকে কুপিয়ে ও শরীর-মস্তক পাথরে থেঁতলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাঁর লাশের ওপর নৃত্য করতেও দ্বিধা করেনি। পুলিশ বলছে, এলাকার ভাঙারির ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে বিরোধের জেরেই দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশের লোকজন হতবিহলে সোহাগ হত্যা প্রত্যক্ষ করলেও এগিয়ে আসেন নি। নির্বিকার ছিলেন হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও। এ সমাজের বেশির ভাগ মানুষই বহু আগে থেকেই সাহস ও বিবেক হারিয়ে ফেলেছে। চোখের সামনে সোহাগ হত্যার মতো বর্বরতা দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেননি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করাকে সরকারের সাফল্য বলে দাবি করেছেন। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হত্যার বিচার করা হবে। এই পোস্টের নিচে একজন শিক্ষিকা মন্তব্য করেন, প্রতিবার আপনি এমন কথা বলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু দেখছি না।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এবং ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা ১ টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন। ইডেন কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভ চলাকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, চাঁদাবাজের কবর খোঁড়, ‘চাঁদাবাজ চাঁদা তোলে, ইন্টেরিম কী করে?’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কে দিল রে জানোয়ার মানুষ মারার অধিকার’ বলে স্লোগান দেন।
হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগের দশম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ফারাবি জিসান বলেন, ‘মিটফোর্ডের সামনে চাঁদাবাজির কারণে একজন মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছেন যুবদল, ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। অথচ দল দায় না নিয়ে তাঁদের শুধুই বহিষ্কার করেছে। আমরা বলতে চাই, এখানে অবশ্যই দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। যেই ছাত্রসংগঠন থেঁতলে মানুষ মারতে পারে, সেই সংগঠন কোনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে না। তাই ছাত্রদল হোক বা শিবির, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দলের কমিটি থাকতে পারবে না। আজকের মধ্যেই ছাত্রদলের কমিটি প্রত্যাহার করতে হবে।’
মিটফোর্ডের ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরাও। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা প্রদক্ষিণ করে এনএসইউর ১ নম্বর গেট এলাকায় এসে শেষ হয়। এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
খেলার মাঠে অদ্ভুত খেলা
ঢাকার খেলার মাঠের সংকট নিয়ে লেখার পাশাপাশি আমরা সাংবাদিকরা মাঠের অব্যবস্থাপনা, বিপন্নতা, চারিত্র বদলে যাওয়া নিয়েও লিখছি। মাদক সেবন, দেহব্যবসা, ছিনতাইকারীদের টাকা ভাগাভাগি- এইসব অদ্ভুত খেলা চলে আসছে ঢাকার অধিকাংশ মাঠেই।
সাংবাদিক আহমেদ ইউসুফের ‘মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া মাঠ আছে, খেলার পরিবেশ নেই’ শীর্ষক প্রতিবেদনে থেকে ঢাকার বড় দুটি এলাকার চালচিত্র সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। তিনি লিখেছেন : ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকায় বেশ কিছু খেলার মাঠ আছে। যেখানে গড়ে ওঠার কথা ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা, বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার পথ আর মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র। সেসব আছে ঠিকই। কিন্তু তদারকির অভাবে অনেক মাঠে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অস্থায়ী চা-সিগারেটের দোকান। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, টাউন হল মাঠ, সলিমুল্লাহ রোড, তাজমহল রোড, জাকির হোসেন রোড এবং লালমাটিয়ার মাঠগুলো ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেহাল চিত্র টাউন হলের শহীদ পার্ক খেলার মাঠের। মাঠের প্রধান দুই প্রবেশপথ দখল করে নিয়েছে চা-সিগারেটের অস্থায়ী দোকান। অন্য আরেকটি প্রবেশপথ ঘিরে আসবাবের দোকান। সেদিকে সরু একটি রাস্তা দিয়ে মাঠে ঢোকা যায়। মাঠে নিয়মিত বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। মাঠের এক কোণে করা হয়েছে মূত্রত্যাগের খোলা ব্যবস্থা। দুর্গন্ধে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নেই এখানে। তাই আশপাশের লোকজন খুব একটা আসতে চান না। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ‘মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক ক্রীড়াচক্র’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে চলছে মাঠের তদারকি। লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা মাঠের এক কোণে শিশুদের খেলার জন্য কিছু রাইডের ব্যবস্থা আছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাঠটির দখল মূলত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে। তাঁরাই বর্তমানে মাঠের দেখভাল করছেন। সোহরাব হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, ৫ আগস্টের আগে এই মাঠে উত্তর সিটি করপোরেশনের কিছুটা তদারকি ছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মাঠের দখল নিয়েছেন। চা-সিগারেটের দোকানও তাঁদের তত্ত¡াবধানে চলে। ভাড়ায় চলানো হয় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। ফলে মাঠের অধিকার হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’
বুধবারে বৃষ্টি
আষাঢ় ফুরোলো, আসছে শ্রাবণ। শ্রাবণ বললেই কানে বাজে ঝরঝর ধারার অপূর্ব ধ্বনি। না, কাব্য করতে বসিনি। বর্ষাকালে বৃষ্টি হবেই, এ আর নতুন কী। নতুন হচ্ছে, বৃষ্টির কার্পণ্য এবং বৃষ্টিহীনতা। যত বছর যাচ্ছে ততোই ঢাকায় বৃষ্টির পরিমাণ কমছে। বর্ষাকালের দুটো মাসের অনেকগুলো দিন থাকছে খটখটা।
আসা যাক বুধবার প্রসঙ্গে। কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহর একটি গল্পের বইয়ের নাম বুধবার রাতে। ষাটের দশকের পাকিস্তানি সেনাশাসন নিয়ে লেখা গল্প আছে ওতে। গত বুধবার ঢাকায় বৃষ্টির মধ্যে অনেকটা পথ হেঁটেছিলাম, পরে বন্ধুর গাড়িতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। তাই সে রাতের বৃষ্টি অনুভব করেছি হাড়েমজ্জায়। মন বিষাদাক্রান্ত থাকলে শহুরে বৃষ্টি সে-বিষণœতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর আনন্দতি হৃদয়ে বৃষ্টি সুরবাদনের মতোই বেজে যায়।
‘সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত’
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন যে অপপ্রচার চলছে, তার পেছনে একেবারে সুনির্দিষ্ট চক্রান্ত রয়েছে। সেই চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়া। সেই চক্রান্ত হচ্ছে যে নেতা (তারেক রহমান), যিনি উঠে আসছেন, যাঁর একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাঁকে নিশ্চিহ্ন করা। তাঁকে খারাপ জায়গায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা।
রোববার বিকেলে গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে লেখা একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে
পিলারে গ্রাফিতি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মেট্রোরেলের পিলারগুলোতে আঁকা হচ্ছে বিশেষ চিত্র। যেখানে ফুটে উঠেছে দেড় দশকের বিভিন্ন ঘটনার প্রতিচ্ছবি। যার শিরোনাম ফিরে দেখা ‘ফ্যাসিস্ট রেজিম’। এর মূল উদ্যোক্তা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রতিটি পিলারেই আঁকার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বিজয় সরণি থেকে চলবে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে টানা কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা। এতে ২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত সমালোচিত ইস্যুগুলো তুলে ধরা হয়েছে শিল্পকর্মের মাধ্যমে। ধারাবাহিকভাবে শাহবাগ থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত হবে হবে এই গ্রাফিতি।
নানা রঙের সংমিশ্রণে দৃষ্টিনন্দন এ চিত্রশৈলীতে উঠে এসেছে পিলখানা ট্র্যাজেডি, খালেদা জিয়ার কারাবরণ, সীমান্তের কাঁটাতারে ফেলানীর মরদেহ, শাপলা চত্বরে গণহত্যা, রাতের ভোট, তত্ত¡াবধায়ক সরকার বাতিল, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস, বিরোধী নেতাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে হামলা, পুলিশি দমন-পীড়ন, তনু ধর্ষণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস, পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা, ক্যাঙারু কোর্ট, নিমতলিতে অগ্নিকাণ্ড, করোনার ভুয়া টেস্ট এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের চিত্র।
১৩ জুলাই ২০২৫
[email protected]
প্যানেল