
.
ফুটবল বিশ্বে একটা কথা বেশ ভালোভাবেই প্রচলিত আছে। যে কোনোভাবে ফাইনালে উঠে এলে আর চেলসিকে আটকানো সম্ভব না! যেভাবেই হোক তারা শিরোপা জয় করবে। নতুন আঙ্গিকে হওয়া ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এ কথা আরেকবার প্রমাণ করেছে ইংলিশ পরাশক্তি চেলসি। রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও ফরাসি পরাশক্তি প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইনকে (পিএসজি) ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে বøুজরা। জোড়া গোল করে ফাইনালের নায়ক বনে গেছেন চেলসির ইংলিশ মিডফিল্ডার কোল পালমার। বিজয়ী দলের হয়ে অপর গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোয়াও পেদ্রো।
ম্যাচের তিনটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। ম্যাচ শেষে বিজয়ী চেলসির খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮১ হাজার ১১৮ সমর্থকের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের উপস্থিতি বাড়তি আকর্ষণের জন্ম দেয়। অথচ সুস্পষ্ট ফেভারিট হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে এসেছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। দাপটের সঙ্গে বড় দলগুলোকে বিদায় করে ফাইনালের টিকিটও পেয়েছিল প্যারিসের পরাশক্তিরা। বিশেষ করে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল ম্যাচের আগে পিএসজি ছিল হট ফেভারিট। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়ে চেলসির কাছে তাদের অবিশ্বাস্য পতন হয়েছে। তাদের ব্যর্থতার ষোলোকলা পূরণ হয়েছে ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে। এ সময় মার্ক কুকুরেলাকে ধাক্কা দিয়ে লালকার্ড দেখেন পিএসজির পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোওয়া নেভেস।
মৌসুমটা স্মরণীয় করে রাখতে এর থেকে বড় কিছু আর হতে পারে না চেলসির জন্য। উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয়ের পর প্রথমবারের মতো ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত বর্ধিত কলেবরের ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপাও তারা শোকেসে ভরেছে। টেবিলের চতুর্থ স্থানে থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলাও নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জেতায় প্রাইজমানি হিসাবে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পকেটে পুরেছে চেলসি। অন্যদিকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পিএসজি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে পরাজিত করে রেকর্ড গড়ে প্যারিসের পরাশক্তিরা। এবার সেই দলটি চেলসির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।
ফাইনালে ম্যাচের ২২ মিনিটের সময় পালমারের কোনাকুনি শটে এগিয়ে যায় চেলসি। পিএসজির লেফট ব্যাক মেনডেসে তার পজিশন থেকে বাইরে চলে এলে পালমার বক্সের ভেতর সুবিধাজনক অবস্থান খুঁজে পায়। এই সুযোগে একইদিক দিয়ে ৩০ মিনিটে তিনি ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। বিরতির দুই মিনিট আগে ব্রাজিলিয়ান পেদ্রো চেলসির হয়ে তৃতীয় গোল করেন। এর আগে ফ্লমিনেন্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালেও জোড়া গোল করেছিলেন পেদ্রো। ম্যাচে জয়ের নায়ক পালমারের প্রশংসা করে চেলসি কোচ এঞ্জো মারেসকা বলেন, ক্লাব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের। আমরা খুব খুশি। বিশেষ করে পিএসজির মতো বিশ্বসেরা একটি দলের বিপক্ষে এই জয়টা সত্যিই বিশেষ অর্জন। আমি মনে করি পিএসজির কোচ লুইস এনরিকে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচ। এ ধরনের ম্যাচে আমরা কোলের কাছ থেকে সবসময়ই কিছু প্রত্যাশা করি। কারণ এটি একটি বড় ম্যাচ, বড় মুহূর্ত। এসব ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণের একটি সুযোগ আসে।
গত মে মাসে উয়েফা কনফারেন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল বেটিসকে ৪-১ গোলে হারায় চেলসি। দুটি গোলে অ্যাসিস্ট করে ওই ম্যাচেও সেরার পুরস্কার জিতে নেন পালমার। বড় মঞ্চে আরও একবার নিজেকে মেলে ধরতে পেরে আনন্দের যেন শেষ নেই তার। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করা এই ইংলিশ মিডফিল্ডার বলেন, আমি ফাইনাল ম্যাচ পছন্দ করি। আরও একবার ফাইনালে ভালো করতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, এই জয়ের অনুভ‚তি চমৎকার। বেশি ভালো লাগছে কারণ ম্যাচের আগে কেউ আমাদের সম্ভাবনা দেখেনি, আমরা সেটা জানি। আমরা যেভাবে লড়াই করেছি, দারুণ ছিল।