ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

তারুণ্যের তেজ

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৪ জুলাই ২০২৫

তারুণ্যের তেজ

তরুণরাই দুনিয়ার সেরা সম্পদ। পৃথিবীর অর্থনীতির চাকা চলমান থাকে তরুণদের বদৌলতে। সব উন্নয়ন ও সম্ভাবনার সূতিকাগার এই তরুণ সমাজ। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নিত্যনতুন আবিষ্কার কিংবা যুদ্ধবিগ্রহের ধ্বংসলীলা সব কিছুর পেছনেই রয়েছে তারুণ্যের দুর্জয় শক্তি। দেশের এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী সম্ভাবনার আধার; কিন্তু এই অযুত সম্ভাবনা কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছাতে পারছে না রাষ্ট্রের প্রায়োগিক নীতি, সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক সংকটের ঘূর্ণাবর্তনের কারণে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তরুণ, যাদের বয়স ১৫-৩০ এর মধ্যে। আমাদের তরুণদের মাঝে একদিকে যেমন রয়েছে, উদ্যোক্তা-মানসিকতা, প্রযুক্তি-সচেতনতা, আবিষ্কারের নেশা, শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রতি অসীম আগ্রহ। আমাদের তরুণ সমাজ ফ্রিল্যান্সিং বা স্টার্টআপে আন্তর্জাতিক বাজার জয় করছে।
অন্যদিকে ভার্চুয়াল জগতে কনটেন্ট-নির্ভর গা-ছাড়া সংস্কৃতির চর্চা, বেকারত্বে ভুগে, হতাশায় ডুবে মাদকাসক্তির অদৃশ্য জগতে হারিয়ে যাওয়ার প্রাচীন প্রচলন, সাম্প্রতিক কালে যা আরো ছড়িয়েছে। এছাড়া ঘুণেধরা দুষ্ট রাজনৈতিক চক্রে জড়িয়ে যাওয়ার ইতিহাসও খুব একটা অদৃশ্য নয়।
ভিজুয়াল দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তি সচেতনতা সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে জন্ম দিচ্ছে বিভ্রান্তির অপসংস্কৃতি। তরুণদের একটি অংশ গা ভাসাচ্ছে ট্রেন্ডের জোয়ারে, অথচ উন্নত নৈতিকতা, আত্মশুদ্ধি ও চিন্তার চর্চা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। 
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও বাংলাদেশে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান অন্যতম প্রধান সমস্যা। সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগ এবং বেসরকারি খাতে কাজের অনিশ্চয়তা তরুণদের হতাশ করে তোলে। এই হতাশা থেকে অনেকেই পাড়ি জমায় বিদেশে, মাদকাসক্ত হয়, আবার কেউ জড়িয়ে পড়ে মাদক বাণিজ্যে, এর বাইরে যারা থাকেন, তারা নানা অপরাধ ও সহিংসতায় সম্পৃক্ত হন অসুস্থ রাজনীতির বেড়াজালে।
তেমনি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়ে অনেকেই হয়ে উঠছে দলে দলে বিভক্ত এক একটি বৈষয়িক ও যান্ত্রিক হাতিয়ার হিসেবে। রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যবহার করছে নির্বাচনী যন্ত্র হিসেবে, তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে, তাদের কোন সৃজনশীল উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
এটি যেমন সত্য বয়ান, ঠিক ভুলে গেলে চলবে না, এ দেশের তরুণরা ৭১-এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে, তারই ধারাবাহিকতায় ২৪-এ ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করেছে। যখন বাংলাদেশের অভিভাবককুল মনে করেই নিয়েছিলেন, এ ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রজন্ম শেষ, ঠিক তখনই তারা দেশের হাল ধরেছে। জুলাই-আগস্টের গণবিপ্লব তারুণ্যের তেজদ্দীপ্ততার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমাদের তরুণরা নির্ভার, এমনটি দৃঢ়চিত্তে বলাই যায়।

প্যানেল

×