
ছবি: সংগৃহীত
দুপুরের খাবার শুধু দিনের সবচেয়ে বড় মিলই নয়, এটি আপনার সামগ্রিক সুস্থতারও ভিত্তি গড়ে দেয়। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের মতে, ভারসাম্যপূর্ণ দুপুরের খাবার আমাদের শক্তি, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও হজমব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। অথচ এই সময়ই আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল করি—অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট, ভাজাপোড়া ও মিষ্টি দিয়ে প্লেট ভর্তি করে ফেলি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কীভাবে দুপুরের খাবার হওয়া উচিত, আর কী এড়িয়ে চলা দরকার—তা নিয়েই আজকের বিশেষ প্রতিবেদন।
দুপুরে উপকারী খাদ্য: কী রাখবেন আপনার প্লেটে
🔹 ভাত নিয়ন্ত্রণে রেখে শাকসবজি ও ডাল
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্লেটের ৫০% হওয়া উচিত বিভিন্ন ধরনের রান্না বা সিদ্ধ সবজি। সঙ্গে ২৫% ভাত বা রুটি এবং ২৫% প্রোটিন—যেমন ডাল, মাছ বা মুরগির মাংস। এতে পেটও ভরে, আবার বাড়তি ক্যালোরিও আসে না।
🔹 মাছ বা মুরগি, তবে চর্বিমুক্ত
মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে। মুরগির মাংস খেতে চাইলে চামড়া ছাড়া ও কম তেলে রান্না করাই উত্তম।
🔹 টক দই বা রায়তা
গরম দুপুরে টক দই বা শসা-টমেটো দিয়ে বানানো রায়তা হজমে সহায়ক এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
🔹 সালাদ
খাবারের আগে শসা, গাজর, বাঁধাকপি, টমেটো দিয়ে তৈরি সালাদ খেলে হজমশক্তি বাড়ে এবং অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
🔹 ফল খান খাবারের কিছু সময় পর
খাবারের ৩০–৪৫ মিনিট পর এক টুকরো কলা, পেঁপে বা আপেল হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখে।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা ভালো দুপুরে
🔸 ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলা
ডালপুরি, সিঙ্গারা বা অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি, অম্বল এবং ক্লান্তিভাব দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্যাস্ট্রিক, লিভার সমস্যা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
🔸 অতিরিক্ত ভাত বা শুধু চালভিত্তিক খাবার
শুধু ভাত দিয়ে দুপুরের খাবার খেলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয় এবং ঘুম ঘুম ভাব আসে। এতে কাজের গতি ও মনোযোগ কমে।
🔸 কোল্ড ড্রিংক ও সফট ড্রিংক
পাচনক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বাড়ায়।
🔸 মিষ্টান্ন ও চিনিযুক্ত ডেজার্ট
মিষ্টি বা মিষ্টি দই দুপুরে বেশি খেলে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে, যা ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যে খাবার খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অনেক দেরিতে খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে গিয়ে হজমে সমস্যা হয়।
দুপুরের খাবার কেবল ক্ষুধা মেটানোর বিষয় নয়, এটি বিকেলজুড়ে কর্মক্ষমতা, হজম এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। একটু সচেতন হলেই আমরা পেতে পারি সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন।
আঁখি