
.
ফেনীতে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। তবে, তাদের থাকার উপযোগী কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘরের অনেক কিছুই ভিজে নষ্ট শেষ হয়ে গেছে। কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়েই নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম শুরু করতে হয়েছে তাদের। নোয়াখালীতে আবারো মুষলধারে বৃষ্টিতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নতুন করে পানিবন্দি হয়েছে ৯০ হাজার মানুষ। এদিকে, মৌসুমিবায়ুর প্রভাবে ভোলায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবার থেকে ফের সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এতে ১০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল বন্দরের অভ্যন্তরে হাঁটুপানি জমেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ৩৬টি ভাঙনস্থল দিয়ে প্রবাহিত পানির স্রোতে ফেনীর ছয়টি উপজেলার ১২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভোগান্তির শিকার লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, খেতের ফসল, খামারের মুরগি। ঘরে পনি ঢুকে ভিজে গেছে যাবতীয় মালামাল।
জেলায় ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সব আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ১৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার ত্রাণ কাজের জন্য নগদ ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৬০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে সেসব এলাকার রাস্তাসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠতে শুরু করেছে। অনেক রাস্তা যানবাহন চলালের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, আগে শুধু ভাঙন এলাকার নাম অনুযায়ী ভাঙন স্থলের সংখ্যা জানতে পেরেছি। শুক্রবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সেজন্য চারদিন ধরে ২০টি ভাঙনের তথ্য থাকলেও এখন বেড়েছে। তিনি বলেন, যেসব ভাঙনস্থল নদীর সঙ্গে মিশে গেছে সেগুলো দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁধের ভাঙন অংশের মেরামত কাজ শুরু হবে।
নোয়াখালী ॥ আবারো মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীতে উদ্বেগ বেড়েছে। নতুন করে পানিবন্দি ৯০ হাজার মানুষ। অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা এখনো কাটেনি। সরকারি হিসাবে জেলা শহর মাইজদী কোর্ট ও উপজেলাসমূহে ৯০ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। শহরের অনেক অফিস-আদালতের সামনে পানি জমে থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সেবাপ্রার্থীদের। তিনদিন তেমন বৃষ্টি হয়নি। তবে, সোমবার ভোর থেকে আবারো মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জলাবদ্ধতা আবারও বাড়তে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন বাসিন্দারা।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক এম আজরুল ইসলাম বলেন, তিনদিন নোয়াখালীতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়নি। সোমবার ভোর থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার প‚র্বাভাস অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ২৪ হাজার ৯৫০টি পরিবারের ৯০ হাজার ৪০৩ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৮টি ঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বরিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ২৩ জন রয়েছে।
ভোলা্ ॥ মৌসুমিবায়ুর প্রভাবে উপক‚লীয় দ্বীপ জেলা ভোলায় আবারও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। সোমবার থেকে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। এর ফলে ভোলা-ল²ীপুরসহ ১০ নৌ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৪৩.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে, বিআইডব্লিউটিএ’র ভোলা নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, টানা সাতদিন পর গত বৃহস্পতিবার অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল শুরু হলেও সোমবার সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি হওয়ায় ফের ভোলা জেলার ইলিশা থেকে ল²ীপুর, মনপুরা-ঢাকাসহ অভ্যন্তরীণ ১০টি নৌ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চ ও সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে, ভোলা-ইলিশা রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ভোলা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলায় ৪৩.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বেনাপোল, যশোর ॥ সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরের অভ্যন্তরে হাঁটুপানি জমে যায়। কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে বেনাপোল বন্দরের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বন্দর এলাকার বিভিন্ন শেড ও ওপেন ইয়ার্ডে হাঁটুপানি জমে গেছে। এতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস ও পরিবহনের কাজ। জলাবদ্ধতার কারণে ৯, ১২, ১৫, ১৬ ও ১৮ নম্বর শেডে পণ্য লোড-আনলোড কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি নিরাপত্তাকর্মীদের চলাফেরাও কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও কমিটি কোনো সুরাহা খুঁজে পাচ্ছে না।
জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরে রেলের জায়গা সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এ কারণে বন্দর থেকে পানি বের হওয়ার কালভার্টগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বন্দর থেকে পানি বের হতে না পারায় বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ব্যাপারে বন্দর উপ-পরিচালক মো. মামুন কবির তরফদার বন্দরের শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি মোকাবিলার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজির হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করার কথা বলেছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ৯২৫-এর সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী জানান, ভারি বর্ষণের কারণে বন্দরে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না। তাছাড়া, পানি জমে থাকায় বন্দরের কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্ষতি হচ্ছে।
প্যানেল