
ছবিঃ সংগৃহীত
মশা এখন আর শুধুই মৌসুমি বিড়ম্বনা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য হুমকিতে রূপ নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ও ইয়েলো ফিভারের মতো ভাইরাসগুলো এখন বিশ্বের নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন মানুষ—মানে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ মানুষ—এই মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রথমবারের মতো মশাবাহিত চারটি ভাইরাসঘটিত রোগের (Arboviral diseases) জন্য統統িত চিকিৎসা নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। লক্ষ্য একটাই—দ্রুত, বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এবং বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলা।
WHO যেসব রোগ লক্ষ্য করেছে:
-
ডেঙ্গু
-
চিকুনগুনিয়া
-
জিকা
-
ইয়েলো ফিভার
(সবগুলোই Aedes aegypti মশার মাধ্যমে ছড়ায়)
এই চারটি রোগের উপসর্গ অনেকটা একরকম—জ্বর, শরীর ব্যথা, র্যাশ, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া। তাই একে অপরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার আশঙ্কা বেশি, বিশেষ করে যখন নির্ভরযোগ্য ডায়াগনস্টিক টেস্ট মেলে না। আর যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না হয়, এসব রোগ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যেমন:
-
ডেঙ্গু অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে
-
ইয়েলো ফিভার লিভারকে আক্রান্ত করতে পারে
-
জিকা গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে
-
চিকুনগুনিয়া দীর্ঘমেয়াদি আর্থ্রাইটিসের মতো জয়েন্ট পেইন সৃষ্টি করতে পারে
WHO-এর সুপারিশ: চিকিৎসায় কী করণীয়?
মৃদু/প্রাথমিক অবস্থায়:
-
প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল গ্রহণ করতে হবে; ডিহাইড্রেশনই প্রাথমিক বড় ঝুঁকি
-
প্যারাসিটামল বা মেটামিজোল ব্যবহার করা যাবে জ্বর ও ব্যথা কমাতে
-
আইবুপ্রোফেন বা NSAIDs ব্যবহার করা যাবে না—রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়
-
কোর্টিকোস্টেরয়েড এড়িয়ে চলতে হবে—অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি করে
গুরুতর/হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ক্ষেত্রে:
-
IV হাইড্রেশনের জন্য ক্রিস্টালয়েড ফ্লুইড ব্যবহার—কলোয়েডের চেয়ে নিরাপদ
-
Capillary refill time এবং lactate level পরীক্ষা করে শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ
-
Passive leg raise টেস্ট দিয়ে শক নির্ধারণ
-
প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন কেবলমাত্র রক্তপাত হলে দেওয়া যাবে—কম সংখ্যা মানেই জরুরি নয়
-
ইয়েলো ফিভার-জনিত লিভার ফেইলিউরে IV N-acetylcysteine ব্যবহার করা যাবে
-
মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি জাতীয় নতুন ওষুধ এখনই ব্যবহার নয়—শুধু গবেষণার আওতায়
এই গাইডলাইন এখনই কেন দরকার?
-
এখন অনেক অঞ্চল একসাথে একাধিক মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে
-
অনেক ক্লিনিকে এখনো পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সরঞ্জাম নেই
-
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন অঞ্চলেও রোগ ছড়িয়ে পড়ছে
-
নতুন চিকিৎসকরা না জেনে চিকিৎসা শুরু করেন, যা বিপজ্জনক
WHO-এর এই গাইডলাইন এইসব সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকর হাতিয়ার। এটি শুধুই চিকিৎসা নয়, বরং বিপর্যয়ের সময়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এক অনন্য কৌশল।
উপকারিতা কী?
-
রোগ দ্রুত শনাক্ত ও সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যাবে
-
হাসপাতালে ভর্তি কমবে, আরোগ্যও হবে দ্রুত
-
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে
-
একই নির্দেশিকা শহর ও গ্রাম সব জায়গার চিকিৎসকদের জন্য সহায়ক হবে
শেষ কথা
মশাবাহিত রোগগুলোকে হালকা করে দেখার সময় এখন আর নেই। WHO-এর নতুন ৬ দফা গাইডলাইন সকল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সচেতন নাগরিকদের জানা থাকা দরকার। আপনার ছোট্ট সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।
মশার বিরুদ্ধে লড়াই এখন গ্লোবাল যুদ্ধ, প্রস্তুতি নিতে হবে সকলকে!
ইমরান