
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় শিশুদের সঙ্গে পিতামাতার মানসিক সংযোগকে ক্ষুণ্ন করছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে দেখা গেছে, শুধুমাত্র ডিভাইস ব্যবহারের সময়েই নয়, সামাজিক মাধ্যমে অধিক সময় কাটানোর অভ্যাস অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে—even when they are offline.
এই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে Digital Media and Developing Minds International Scientific Congress-এ, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ আলাবামার পিএইচডি গবেষক লিজ রবিনসন।
গবেষণায় ২ থেকে ৫ বছর বয়সী ৬৫ জন শিশুর মা এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর ধরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যেসব মা দৈনিক সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে ১৬৯ মিনিট সময় কাটান, তারা মোবাইল ফোন না থাকলেও সন্তানের সঙ্গে খেলাচ্ছলে ২৯% কম কথা বলেন—তাদের তুলনায় যারা দিনে গড়ে মাত্র ২১ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকেন।
মনের অনুপস্থিতি: ডিজিটাল ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি ছাপ
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আবহাওয়া দেখা বা ইমেইল চেক করার মতো স্ক্রিন-সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে এই ধরনের নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। গবেষণাটি এখনও কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত না হলেও বিশেষজ্ঞরা এর ফলাফলকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন।
Children and Screens: Institute of Digital Media and Child Development-এর নির্বাহী পরিচালক ক্রিস পেরি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট পরিবেশন করে, যা মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এমনকি ব্যবহার থেমে যাওয়ার পরেও তা মন থেকে বিচ্ছিন্ন হয় না। ফলে শিশুর সঙ্গে থাকলেও অভিভাবকের মন অন্যত্রে সরে থাকে।”
ভাষা ও আবেগ বিকাশে কথোপকথনের অপরিহার্যতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর ভাষা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং মনোযোগের বিকাশে পিতামাতার সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগ ও কথোপকথন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিস পেরির ভাষ্য, “ভাষা শেখা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে অন্যতম প্রধান উপাদান। জন্ম থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ভাষা গ্রহণ ও প্রকাশের সুযোগ থাকা জরুরি।”
গবেষক লিজ রবিনসন বলেন, “শিশুরা খুব সহজেই বোঝে পিতামাতার দৃষ্টি ও মনোযোগ কোথায় কেন্দ্রীভূত। যখন একজন অভিভাবক বারবার ডিভাইস বা ফোনের দিকে মনোযোগ দেন, তখন শিশুর কাছে সেটাই গুরুত্ব পায়।”
সমাধান: মনোযোগের মাধ্যমে মানসিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা
বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিভাবকদের উচিত প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও নির্দিষ্ট সময় একান্তভাবে সন্তানের সঙ্গে কাটানো, যাতে মনোযোগ বিচ্যুতি না ঘটে। এমনকি অল্প সময়ের মানসম্পন্ন উপস্থিতিও শিশুর মানসিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
রবিনসন বলেন, “আমরা স্বীকার করি, সারাদিনের সব কাজ বাদ দিয়ে সন্তানের সঙ্গে সবসময় থাকা সম্ভব নয়। তবে মাত্র ১৫ মিনিটের মনোযোগপূর্ণ সময়ও শিশুর কাছে অনেক মূল্যবান। ওই অল্প সময়েই তারা আমাদের ভালোবাসা, গুরুত্ব এবং সংযোগ অনুভব করে।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুর দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু এই মুহূর্তটাই বাস্তব। অতীত বা ভবিষ্যৎ নয়—এখনকার আপনিই তার জগৎ। সেজন্য তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় অন্য চিন্তা থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে পুরোপুরি উপস্থিত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।”
Jahan