ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

উপকারী বৃক্ষের নীরব ঘাতক পরগাছা

সংরক্ষণে থাকুক প্রকৃতি, বাঁচুক বৃক্ষ—মুক্ত হোক পরগাছার আগ্রাসন থেকে

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৬ জুলাই ২০২৫

উপকারী বৃক্ষের নীরব ঘাতক পরগাছা

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

বৃক্ষের জীবনও অনেকটা মানুষের মতো। জন্ম, বেঁচে থাকা, বৃদ্ধ হওয়া, আবার ধীরে ধীরে মরে যাওয়া। তবে গাছেদেরও এমন কিছু শত্রু থাকে, যাদের উপস্থিতি ধরা পড়ে না সহজে, কিন্তু ধীরে ধীরে গাছটিকে নিঃশেষ করে দেয়। এদেরই একটি হলো পরগাছা—প্রকৃতির এক নিঃশব্দ ঘাতক।

পরগাছা কী?

পরগাছা হলো এমন এক ধরনের উদ্ভিদ, যা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে তার খাদ্য, পানি ও পুষ্টি সংগ্রহ করে। এরা নিজেরা খাদ্য তৈরি করে না বা অনেক সময় সামান্য করে। এ কারণে এদের পরজীবী গাছ বা পরগাছা বলা হয়। এদের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধির জন্য অন্য গাছের সহায়তা প্রয়োজন হয়।

কোথায় জন্মায় পরগাছা?

পরগাছা মূলত গাছের কাণ্ড, ডাল কিংবা শাখায় জন্ম নেয়। এদের লতা বা শিকড় গাছের গায়ে গেঁথে যায় এবং ধীরে ধীরে মূল গাছের শরীর থেকে রস শুষে নেয়। অনেক সময় মাটিতে না লাগিয়েও কেবল অন্য গাছের উপর ভর করেই এরা বেড়ে ওঠে।

সাধারণ পরগাছার কিছু উদাহরণ:

অকনা (Cuscuta): পাতাহীন, হলুদ বা কমলা রঙের একধরনের লতা, যা দ্রুত গাছকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।

মিস্টেলটো (Mistletoe): ছোট গাছের মতো দেখতে, কিন্তু এটি আংশিক পরগাছা।

র‍্যাফ্লেসিয়া: বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল, তবে এটি অন্য গাছের শিকড় থেকে পুষ্টি নেয়।

লোরেথা বা বেনিয়ান লতা (Loranthus): শীতপ্রধান অঞ্চলে দেখা যায়, পাতাসহ পরগাছা, যা গাছের ডালে জন্মায়।

পরগাছার ক্ষতিকর দিক:

১. খাদ্য ও পানির প্রতিযোগিতা: পরগাছা মূল গাছের খাদ্য ও পানি শুষে নেয়, ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে।

২. বৃদ্ধি ব্যাহত হয়: গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির গতি কমে যায়।

৩. ফলন কমে যায়: ফলদ বৃক্ষের উপর পরগাছা জন্মালে ফল উৎপাদন কমে যেতে পারে।

৪. গাছের মৃত্যু: দীর্ঘ সময় ধরে পরগাছা থাকার ফলে গাছ সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে মারা যেতে পারে।

৫. জঙ্গলে আগ্রাসন: বনাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরগাছা ছড়িয়ে পড়লে অনেক প্রাকৃতিক গাছ হুমকির মুখে পড়ে।

করণীয়:

নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: বাগান বা গাছপালা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যেন পরগাছা প্রথমেই ধরা পড়ে।

পরগাছা অপসারণ: হাতে বা কাঁচি দিয়ে লতা কেটে ফেলা এবং মূল অংশ ভালোভাবে তুলে ফেলা।

প্রতিকারমূলক ছাঁটাই: পরগাছা যেসব ডালে জন্ম নিয়েছে তা প্রয়োজন হলে কেটে ফেলা।

সচেতনতা: কৃষক ও সাধারণ মানুষকে পরগাছার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করা।

পরগাছা অনেকটা সমাজের সেই পরজীবী মানুষের মতো, যারা নিজের কিছু না করে অন্যের শ্রমের উপর নির্ভর করে বাঁচতে চায়। আমাদের বৃক্ষসম্পদকে বাঁচাতে হলে পরগাছা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। একেকটি গাছ কেবল অক্সিজেন দেয় না, দেয় ছায়া, দেয় ফল, দেয় জীবন। তাদের নিঃশব্দ শত্রুদের চিনে ফেলাই হোক আমাদের দায়িত্ব।

নোভা

×