
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব আজ এক গভীর পরিবেশগত সংকটে নিপতিত। শিল্পায়ন, নির্বিচারে বন নিধন ও ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, খরা, অতিবৃষ্টি, উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। এমন অবস্থায় আগামী পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য বৃক্ষ বা গাছের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
বৃক্ষ একদিকে যেমন পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে, তেমনি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে বৃক্ষরোপণ আর বিলাসিতা নয়, এটি মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একটি অপরিহার্য উদ্যোগ।
বৃক্ষ মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে, যা একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ একদিনে উৎপাদন করতে সক্ষম। বৃক্ষ শুধু অক্সিজেনই দেয় না, এটি পরিবেশে ছায়া দেয়, শব্দ দূষণ রোধ করে, পানি ধারণ করে, মাটির ক্ষয় রোধে সহায়তা করে এবং খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির উৎস হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও, বৃক্ষ বৃষ্টিপাতকে উৎসাহিত করে এবং স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। বসতবাড়ি, খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু গবেষণা সংস্থা IPCC-এর একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস না করা যায়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যেই জলবায়ু বিপর্যয় হয়ে উঠবে অনিয়ন্ত্রিত। এই বাস্তবতায় গাছপালা ও বনাঞ্চল রক্ষাকে সবচেয়ে কার্যকর ও টেকসই হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৃক্ষ শুধু কার্বন শোষণ করে না, বরং স্থানীয় জলবায়ু, আর্দ্রতা, মাটির উর্বরতা ও বৃষ্টিপাতের ধরণকেও প্রভাবিত করে। তাই গাছ লাগানো মানে শুধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান সৃষ্টি নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অনেক এলাকায় মানবজীবন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে সরকারি হিসাবে বনভূমির পরিমাণ জাতীয় ভূখণ্ডের মাত্র ১৫ শতাংশের নিচে, যা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ২৫ শতাংশ হওয়া উচিত। এ অবস্থায় সরকারের বৃক্ষরোপণ অভিযানের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, পারিবারিক জমি, খালি জায়গা ও রাস্তার ধারে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে পারে।
ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ভারসাম্য আজকের সঠিক সিদ্ধান্ত ও কাজের ওপর নির্ভর করছে। আমাদের আজকের একটি গাছ লাগানো হতে পারে আগামী প্রজন্মের জীবনের জন্য আশার আলো। গাছ লাগানো কেবল ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, এটি একটি জাতীয় কর্তব্য। বৃক্ষ মানে জীবন। বৃক্ষ মানে ভবিষ্যৎ।
রাকিব