ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

বিলুপ্তির মুখে হাকালুকির রানি মাছ: অস্তিত্ব রক্ষায় দরকার জরুরি উদ্যোগ

জালালুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, জুড়ী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২৫ জুন ২০২৫

বিলুপ্তির মুখে হাকালুকির রানি মাছ: অস্তিত্ব রক্ষায়  দরকার জরুরি উদ্যোগ

রানি মাছ

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর হাকালুকি হাওর আজ এক সংকটময় বাস্তবতার মুখোমুখি। এক সময় এই হাওরের জলাভূমি, নদী-নালা ও খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়তো দেশীয় প্রজাতির জনপ্রিয় ও সুস্বাদু রানি মাছ। তবে গত কয়েক বছরে ক্রমেই কমে এসেছে এই মাছের দেখা। চলতি বছর তো হাওরে রানি মাছ একেবারেই দুর্লভ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রানি মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাদের মতে, আগামীতে এই মাছ একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা আক্ষেপ করে জানান, রানি মাছের বংশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ বা কোনো সরকারি সংস্থার তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। ফলে এক সময় হাওর অঞ্চলের পরিচিত ও পছন্দের মাছটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর একটি, যা ২৪৩টি বিল নিয়ে গঠিত। সারা বছর এখানে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায়। হাওরের পরিবেশে দেশীয় মাছের প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার ঘটে থাকে। তবে বিগত বছরগুলোতে তেলাপিয়া, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ চাষযোগ্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশীয় প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে রানি মাছের সংরক্ষণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরসহ আশপাশের জলাশয়গুলো থেকে ইতোমধ্যে ২৩টি দেশীয় মাছের প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এসব মাছের অনেকগুলোর নামও নতুন প্রজন্ম জানে না। এই তালিকায় অন্যতম হচ্ছে রানি মাছ, যা এক সময় সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অত্যন্ত পরিচিত ও রসনাসম্মত মাছ ছিল।

মাত্র এক দশক আগেও জুড়ী উপজেলার হাটবাজারগুলোতে এই সময়ে রানি মাছের প্রচুর বেচাকেনা হতো। সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই উচ্চমূল্য দিয়ে এই মাছ কিনতেন। বর্তমানে সংখ্যায় হ্রাস পাওয়ায় বাজারে রানি মাছ প্রায় অনুপস্থিত।

স্থানীয় মৎস্যজীবী ও হাওরবাসীদের মতে, সরকার যদি চাষযোগ্য অন্যান্য মাছের মতো রানি মাছের সংরক্ষণ ও চাষে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আবারও হাকালুকি হাওর ও এর আশপাশের জলাশয়গুলোতে এই মাছের পুনরাবির্ভাব সম্ভব। তারা বলেন, এর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা, অভয়াশ্রম সম্প্রসারণ এবং স্থানীয়দের সচেতনতা বৃদ্ধি।

দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাকালুকির রানি মাছের মতো প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় খুব শিগগিরই এ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য শুধুই স্মৃতিতে রয়ে যাবে।

Mily

×