
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বর্তমান যুগের একটি নীরব ঘাতক। এটি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এই সমস্যার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রাকৃতিক খাবার নিয়মিত খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিচে তুলে ধরা হলো এমনই ২০টি কার্যকর খাবারের তালিকা।
১. আপেল
প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে রক্তচাপ কমার সম্ভাবনা প্রায় ৯ শতাংশ। আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক উপাদান নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সাহায্য করে, যা রক্তনালিকে শিথিল করে এবং রক্তচাপ কমায়।
২. সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু, মালটা প্রভৃতি সাইট্রাস ফলে থাকে হেসপেরিডিন, যা হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।
৩. কলা
কলা পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ। এটি শরীর থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে এবং রক্তনালির চাপ কমায়।
৪. কিউই
প্রতিদিন তিনটি করে কিউই ফল খেলে আট সপ্তাহের মধ্যে রক্তচাপে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
৫. ব্লুবেরি
ব্লুবেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক পলিফেনল উপাদান রক্তচাপ কমাতে কার্যকর। প্রতিদিন ১ কাপ ব্লুবেরি পাউডার দিয়ে তৈরি পানীয় খেলে রক্তচাপ কমে।
৬. ডালিম
ডালিমের রস নিয়মিত পান করলে সিসটোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ উভয়ই কমে। তবে নিশ্চিত হতে হবে, রসে যেন চিনি না থাকে।
৭. আখরোট
প্রতিদিন ২–৩ আউন্স আখরোট খেলে হৃদপিণ্ডে প্রবাহিত রক্তের চাপ কমে। এটি রক্তপ্রবাহ উন্নত করে।
৮. পেস্তা বাদাম
উচ্চ কোলেস্টেরলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন ১.৫ আউন্স পেস্তা উপকারী। এটি মানসিক চাপজনিত রক্তচাপও কমাতে সাহায্য করে।
৯. বাদাম
প্রতিদিন ৪৩ গ্রাম বাদাম খেলে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়। এতে আছে ফাইবার, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।
১০. স্যামন মাছ
স্যামনে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতিদিন ৩ গ্রাম ওমেগা-৩ গ্রহণে সিসটোলিক রক্তচাপে গড়ে ৪.৫ mmHg কমে আসে।
১১. সারডিন মাছ
সারডিনে ওমেগা-৩ ছাড়াও পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক থাকে। এগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
১২. শাকসবজি
কেল, পালং শাক, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে থাকা নাইট্রেট রক্তচাপ কমায়। প্রতিদিন ১ কাপ শাক খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকার মেলে।
১৩. বিট
বিটরুটের রসে থাকা উচ্চমাত্রার নাইট্রেট রক্তপ্রবাহ বাড়ায় ও রক্তচাপ কমায়। টানা দুই সপ্তাহ খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৪. গাজর
প্রতিদিন ১০০ গ্রাম (প্রায় ১ কাপ) কাঁচা গাজর খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ১০ শতাংশ কমে।
১৫. রসুন
রসুন রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে রক্তচাপ হ্রাসে ভূমিকা রাখে। বিশেষত ‘কিওলিক’ বয়সকালীন রসুন এক্সট্রাক্টে এ উপকারিতা বেশি দেখা যায়।
১৬. আদা
৩ গ্রাম বা তার বেশি আদা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপ কমে। তবে সাধারণ রান্নায় ব্যবহার করলে এমন প্রভাব ততটা দৃশ্যমান নয়।
১৭. ডাল, মটর, শিম
প্রতিদিন ১ কাপ রান্না করা ডাল বা মটর খেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। এগুলো দেহে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়ায়।
১৮. টমেটো এক্সট্রাক্ট
লাইকোপিন ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ টমেটো এক্সট্রাক্ট (প্রতিদিন ১০–১৫ মিলিগ্রাম) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
১৯. ওটস
ওটসে থাকা বেটা-গ্লুকান ফাইবার সিসটোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমায়। ১.৫ কাপ রান্না করা ওটমিলে প্রায় ৪.৮ গ্রাম বেটা-গ্লুকান পাওয়া যায়।
২০. ব্রাউন রাইস
যারা নিয়মিত ব্রাউন রাইস, গার্মিনেটেড রাইস বা গম-ভুসি যুক্ত চাল খান, তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যায়।
প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীরের শক্তি জোগায় না, দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও দারুণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিনের খাবারে এই ২০টি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য পরিকল্পনা করলে সেটি আরও কার্যকর হবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/2tj44uxx
আফরোজা