ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

গাজার কান্না কি পৌঁছাবে নিউইয়র্ক সিটির সম্ভাব্য মেয়রের কাছে

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০২:০৮, ২৬ জুন ২০২৫

গাজার কান্না কি পৌঁছাবে নিউইয়র্ক সিটির সম্ভাব্য মেয়রের কাছে

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর—বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী মহানগরী। সেই শহরের পরবর্তী মেয়র হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হতে যাচ্ছেন এক মুসলিম তরুণ, জোহরান মামদানি। যদি নভেম্বরের নির্বাচনে জয় পান, তবে তিনিই হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র।

৩৩ বছর বয়সী এই তরুণ ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট আন্দোলনের একজন দৃঢ়পন্থী নেতা। তার বিজয় শুধু একটি প্রার্থিতার নয়—এটি হচ্ছে আমেরিকান সমাজে বহুত্ববাদ, ধর্মীয় সহনশীলতা, এবং নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের এক যুগান্তকারী প্রতীক। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবেই জয় নিশ্চিত করা মানে, নিউইয়র্কের মতো একটি ডেমোক্র্যাট-অধ্যুষিত শহরে প্রায় নিশ্চিত মেয়র পদ।

জোহরান মামদানি নির্বাচনী প্রচারে ইসলামি বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে লুকাননি। রমজান মাসে রোজা রেখে তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন; জুমার নামাজে গিয়েছেন মসজিদে, মুসলিম যুব সমাজের মধ্যে নেতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে—তিনি কি পারবেন বিশ্বের মুসলমানদের পক্ষে কথা বলতে?
মামদানি ইতোমধ্যে গাজা ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলে তাকে ইসলামবিরোধী ও ইহুদিবিদ্বেষী বলে আক্রমণ করা হয়েছে।

তবে ইহুদি নেতা ব্র্যাড ল্যান্ডার ও কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী মাইকেল ব্লেকের সঙ্গে পারস্পরিক সমর্থন জোট গড়ে মামদানি সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন বাস্তব কাজের মাধ্যমে। মামদানির নিজের ভাষায়— “আমি আমার বিশ্বাস বা মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি কখনো ত্যাগ করবো না।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় যেমন দৃঢ় অবস্থানে আছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও মানবিক ন্যায়বিচারের পক্ষেই উচ্চকণ্ঠ।

যখন একজন মুসলিম ব্যক্তি এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে উঠে আসেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে—অন্য ধর্মের মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হবে? মামদানি সেই বিভাজন দূর করার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তাঁর ইহুদি এবং খ্রিস্টান মিত্ররা একযোগে বলেছেন, এই জয় বিভাজনের নয়, বরং সহাবস্থানের উদাহরণ।

ইহুদি প্রার্থী ব্র্যাড ল্যান্ডার তার বিজয় উপলক্ষে বলেন: “আমরা মুসলিম ও ইহুদি নিউইয়র্কারদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হতে দেব না। জোহরান মামদানি উগান্ডায় জন্ম নেওয়া একজন ভারতীয় মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার মা হলেন বিখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার। একজন অভিবাসীর সন্তান হিসেবে, তার জয় হচ্ছে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের প্রতীক।

লিবারেল ভাষ্যকার ওয়াজাহাত আলী টুইট করেন: “একজন মুসলিম অভিবাসীর সন্তান নিউইয়র্কের মেয়র হতে চলেছেন—এই গল্প আমেরিকান গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”

জোহরান মামদানির জয় শুধু একজন প্রার্থীর নয়, এটি একটি বিশ্বাস, একটি আন্দোলন, একটি পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। তিনি কি পারবেন মুসলিম বিশ্বের হয়ে কথা বলতে? ইতিহাস বলছে, যদি একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারেন, তবে একজন মুসলিম মার্কিন মেয়রও পারে। প্রশ্নটা এখন মামদানির একার নয়, প্রশ্নটা এখন নিউইয়র্কবাসীর, আমেরিকার এবং মুসলিম বিশ্বের।

আঁখি

আরো পড়ুন  

×