
ছবিঃ সংগৃহীত
মাইক ফ্রিমন্ট—ওহাইওর এক বাসিন্দা, যার বয়স এখন ১০৩ বছর। কিন্তু বয়স যেন তার জন্য শুধুই সংখ্যা। একসময় যাকে বলা হয়েছিল যে তার আর মাত্র তিন মাস বেঁচে থাকার সময় আছে, সেই মানুষটাই এখন পাহাড়ি সিঁড়ি ভাঙেন, ক্যানো চালান, এমনকি ৯৮ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০ মাইল দৌড়েছেন। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি শৃঙ্খলা, প্রকৃতিনির্ভর জীবন এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে।
ক্যানসার জয়: ৬৯ বছর বয়সে জীবনের মোড় ঘোরা
৬৯ বছর বয়সে ডাক্তাররা তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন—ক্যানসার হয়েছে, সার্জারি না করলে আর মাত্র তিন মাস বাঁচবেন। কিন্তু মাইক হার মানেননি। তিনি জীবনধারায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটান। মিচিও কুশির লেখা The Cancer Prevention Diet বই পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একটি প্ল্যান্ট-বেইজড ম্যাক্রোবায়োটিক ডায়েট গ্রহণ করেন। কিছু সময় পর দেখা যায়—শুধু ক্যানসার নয়, তার আর্থ্রাইটিসও চলে গেছে।
খাবারই তার ওষুধ
১৯৯৪ সাল থেকে মাইক সম্পূর্ণ নিরামিষ, পরিশুদ্ধ এবং সহজ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে চলেছেন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকে—বাদামী চাল, সেদ্ধ সবজি (যেমন পালং শাক, গাজর, বাঁধাকপি), সামুদ্রিক শৈবাল এবং প্রতিদিন আধা ক্যান বিণস। বিণসে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন ও ক্যানসারবিরোধী উপাদান, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও স্বীকৃত।
তিনি পরিহার করেন:
-
চিনি
-
মাংস
-
দুগ্ধজাত পণ্য
-
প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার
-
তেল বা ভাজা খাবার
সবসময় প্রাকৃতিক ও সহজভাবে রান্না করা খাবার খান—সেদ্ধ, ভাপে বা ফারমেন্টেড।
চলাফেরা শুধু শরীরচর্চা নয়, জীবনের অংশ
মাইকের বয়স ১০৩ হলেও, আজও তিনি প্রতিদিন শরীরচর্চা করেন। ৯৮ বছর পর্যন্ত তিনি তিন দিন করে ১০ মাইল দৌড়াতেন, দিনে ৪৮ বার সিঁড়ি ভাঙতেন, এখনো ক্যানো চালান ও পুল-আপ করেন অনায়াসে।
তার জন্য শরীরচর্চা কোনো “ওয়ার্কআউট রুটিন” নয়, বরং প্রাকৃতিক অভ্যাস। CDC (Centers for Disease Control and Prevention) এর গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ বয়সের প্রভাব কমায়, জয়েন্ট ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে।
ঘুম: সহজ কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী অভ্যাস
মাইক প্রতিদিন ৮-৯ ঘণ্টা ঘুমান। কোনো অ্যালার্ম নয়, কোনো মোবাইল স্ক্রিন নয়—শুধু শান্ত ও গভীর ঘুম।
বিজ্ঞান বলে, ঘুম কোষ মেরামত করে, দেহে ইনফ্লেমেশন কমায়, মস্তিষ্ককে পুনরুজ্জীবিত করে। মাইকের জীবনে এই অভ্যাস নিঃসন্দেহে দীর্ঘজীবনের অন্যতম রহস্য।
প্রাকৃতিক জীবনযাপন: ওষুধের বিকল্প নয়, কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়েই সুস্থতা
মাইক কখনো গর্ব করেন না যে তিনি ডাক্তারদের এড়িয়ে চলেন। বরং বলেন—তার প্রয়োজন হয়নি। তিনি নিজেই নিজের শরীরের যত্ন নিয়েছেন। নিজের খাবার নিজে চাষ করেন, ফিল্টার করা পানি পান করেন, রাসায়নিকমুক্ত পণ্য ব্যবহার করেন এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যেই থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সংস্পর্শ কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমায়, ঘুম ভালো করে, এমনকি মাটির ব্যাকটেরিয়া ইমিউন সিস্টেমও শক্তিশালী করে।
অলৌকিক নয়, প্রতিদিনের অভ্যাসই তার সাফল্য
মাইক ফ্রিমন্টের গল্প হয়তো অনেকে ‘মিরাকল’ ভাববেন, কিন্তু এর পেছনে আছে প্রতিদিনের ছোট ছোট সৎ অভ্যাস।
👉 processed খাবার বাদ
👉 প্রতিদিন শরীরচর্চা
👉 পর্যাপ্ত ঘুম
👉 প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস
তিনি কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন না, কোনো কোর্স চালাচ্ছেন না—শুধু তার নিজের জীবনের গল্পটাই সবাইকে অনুপ্রাণিত করছে।
পরিবার ও কমিউনিটির গুরুত্ব
দীর্ঘজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের পরিবার ও সমাজের সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ থাকে, তারা মানসিকভাবে বেশি স্থিতিশীল থাকেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয় এবং দ্রুত অসুস্থতা থেকে সেরে উঠেন। একাকীত্ব শুধু মানসিক নয়, শারীরিক অসুস্থতারও অন্যতম কারণ।
শুরু করুন সহজে:
✅ পরিষ্কার খাবার খাওয়া
✅ নিয়মিত শরীরচর্চা
✅ ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম
✅ পরিবার ও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ
“বয়স বাড়া মানেই দুর্বল হওয়া নয়, বরং প্রকৃতির নিয়মে জেগে থাকা।”—মাইক ফ্রিমন্ট
ইমরান