ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

হাসনাত আবদুল্লাহ’র ফেসবুক পোস্ট থেকে

স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা!

প্রকাশিত: ২২:০৫, ২৪ জুন ২০২৫

স্বাধীন বাংলাদেশে দুদকের চা খাওয়ার বিল ১ লাখ টাকা!

নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ফেসবুক পোস্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এমন এক সময় এসেছে, যখন চা খাওয়ার বিল হিসেবেও ১ লাখ টাকা দাবি করছে দুদক।

হাসনাত তার পোস্টে উল্লেখ করেন, কোনো ব্যক্তির নামে দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও ‘ক্লিয়ারেন্স’ নেওয়ার জন্য তাকে ১ লাখ টাকা দিতে বলা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ‘মাহমুদা মিতু’ নামের এক চিকিৎসকের উদাহরণ টেনে বলেন, সম্প্রতি তাকে দুদকের একজন মহাপরিচালক (ডিজি) আকতার এবং এক উপপরিচালক (ডিডি) পরিচয়ে ফোন করে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। ফোনে মিতুকে বলা হয়, “আপনি তো একজন ডাক্তার, আপনার টাকার অভাব হওয়ার কথা না, আপনি এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।”

হাসনাত আরও অভিযোগ করেন, দুদকের সর্বনিম্ন ঘুষের হার নাকি ১ লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই কর্মকর্তা পুনরায় ফোন করে জানতে চান, “টাকা দিবেন কি না?” আর টাকা না দিলে, “খবর করে ছেড়ে দেওয়া হবে”—এমন হুমকিও দেওয়া হয়।

ফেসবুক পোস্টে এনসিপি নেতা আরও দাবি করেন, মাহমুদা মিতু রেড ক্রিসেন্টে যোগ দিয়েছেন ৫ আগস্টের পরে। অথচ দুদক বর্তমানে তদন্ত করছে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি নিয়ে। হাসনাতের ভাষ্য, "হাস্যকরভাবে তখনকার কর্মকর্তাদের নাম না দিয়ে এখনকার লোকজনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। এখানে বড় অংকের লেনদেনের সম্ভাবনা প্রবল। যারা কিছুই করেননি, তাদের কাছে যদি ১ লাখ টাকা চাওয়া হয়, তাহলে আগের আমলের দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে কত নেওয়া হয়েছে?"

তিনি বলেন, “দুদকের এসব আচরণ এই প্রথম নয়। হাসিনার আমলে খালেদা জিয়াসহ বহু বিরোধী দলের নেতাদের হয়রানি করেছে দুদক। অথচ আওয়ামী লীগের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির ব্যাপারে তারা চুপ থেকেছে। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পরে এই চিত্র বদলাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখন তারা চা খাওয়ার জন্য ১ লাখ টাকা চাওয়া শুরু করেছে।”

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও দাবি করেন, মাহমুদা মিতু সাহস করে ফোনালাপের ভিডিও করে রেখেছেন এবং ঘুষ দেননি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কত সাধারণ মানুষ এই চায়ের বিল দিতে বাধ্য হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই।

তার ভাষায়, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। মাহমুদা মিতু কেন, আমার নামেও যদি এক পয়সা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, সেটা প্রকাশ করুন। কাউকে ফোন করার দরকার নেই—দুর্নীতির প্রমাণ পেলে সরাসরি মামলা দিন। আইনের হাতে দিন। কিন্তু নিরীহ মানুষদের কেন চাঁদাবাজির মুখে ফেলছেন? কেন টাকা না দিলে হুমকি দেন?”

পোস্টের শেষাংশে এনসিপি নেতা বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চেয়েছি। হাসিনার রেখে যাওয়া দুর্নীতির পথ যেন কেউ আর অনুসরণ না করে, তাই আমরা চেয়েছিলাম দুদক নতুন রূপে গড়ে উঠুক। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দুদক পুরনো পথেই হাঁটছে। আমলাতন্ত্র আবার বিষদাঁত বের করে কামড় বসাতে চলেছে। এই বিষদাঁত যদি ভাঙা না যায়, তাহলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নও হেরে যাবে।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আমলাদের এক লাখ টাকার চা খাওয়ানোর জন্যই কি জুলাইতে বাংলাদেশের মানুষ জীবন দিয়েছিল?”তার দাবি, এই ঘুষকাণ্ডের বিচার জরুরি, এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ এই দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভেঙেই তৈরি করতে হবে।

 

আফরোজা

×