
দেশে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বেড়েই চলেছে
দেশে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। আর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগিদের মধ্যে ৮২ শতাংশের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে বলে জানায় আইসিডিডিআরবি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মঙ্গলবার পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি। এদিন প্রতি ১০০ নমুনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে জানানো হয়, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু ২৯ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে এই বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এ ছাড়া ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে শনাক্ত হয়েছে ২০ লাখ ৫২ হাজার ১৮ জন, এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্ত ৪৭৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এটি এ বছর একদিনে সর্বাধিক রোগী। এর মধ্যে ১৫৭ জনই বরিশাল বিভাগের সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে। তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ মারা যায়নি।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৪৪ জন। এতে বলা হয়, চলতি জুন মাসে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৯৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। যার মধ্যে ঢাকায় ৩১০ জন, বাকি ৭৭০ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগ ছাড়াও চট্টগ্রামে (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ৫৮ জন, ঢাকায় (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ৩৫ জন, খুলনায় (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ৮ জন এবং রাজশাহীতে (সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে) ৪৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫০ জন রোগী পাওয়া গেছে।
তথ্য মতে, এই বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চে ৩৩৬ জন, এপ্রিলে ৭০১ জন, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, এপ্রিলে ৭ জন, মে মাসে ৩ জন এবং জুনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন।
এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহে, আইসিডিডিআরবির ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির বিভিন্ন শাখায় জ্বর ও অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে আসা ১৭১ রোগীর মধ্যে ১৪০ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। এই শনাক্তের হার প্রায় ৮২ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আইসিডিডিআরবি ঢাকাবাসীসহ সবাইকে চিকুনগুনিয়া বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সোমবার প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮৯ জনের পরীক্ষায় ১৪৯ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়, তখন শনাক্তের হার ছিল ৫২ শতাংশ।
আইসিডিডিআরবি জানায়, চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা জিকা ও ডেঙ্গুর মতো এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণে হঠাৎ করে উচ্চ জ্বর, তীব্র জয়েন্টে ব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা দেয়। আশপাশে জমে থাকা পানি (যেমন- ফুলদানি, টব, টায়ার, বালতি এ ধরনের পাত্রে) প্রতি ৩ দিনে একবার ফেলে দিন, যেন এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে না পারে।
অব্যবহৃত পানির পাত্র ঢেকে রাখুন এবং ব্যবহৃত পাত্রগুলো ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ, মশার ডিম পাত্রের গায়ে লেগে থাকতে পারে। মশার আবাসস্থল ধ্বংস করতে মশানাশক স্প্রে বা ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। ঘরের ভেতরে স্প্রে, কয়েল, জানালায় নেট এবং দিনে-রাতে মশারি ব্যবহার করা জরুরি। মশার কামড় এড়াতে হাল্কা রঙের ফুলহাতা জামা ও লম্বা প্যান্ট পরার পরামর্শ তাদের।
আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, গিরায়-গিরায় ব্যথা, পেশিতে ব্যথা, ফুসকুড়ি, বমিভাব ও দুর্বলতা প্রভৃতি চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ। চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ও জিকার উপসর্গে মিল থাকতে পারে। ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে জানায় সংস্থাটি।