
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে ক্যান্সার একটি ভয়াবহ এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া স্বাস্থ্যঝুঁকি। এর মধ্যে রক্তে হওয়া ক্যান্সার বা ব্লাড ক্যান্সার আরও বেশি জটিল, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে এর উপসর্গ অনেকটাই সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হতে পারে। ফলে অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়। তবে কিছু বিশেষ ধরনের ব্যথা রয়েছে, যেগুলো ব্লাড ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে।
হাড়ে ও সন্ধিতে (জয়েন্টে) ব্যথা
ব্লাড ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো হাড় ও সন্ধিতে (জয়েন্ট) ব্যথা। বিশেষ করে যেসব রক্তকোষ অস্থিমজ্জায় উৎপন্ন হয়, সেসব কোষে অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হয় এবং ব্যথা তৈরি হয়। এই ব্যথা সাধারণত পিঠ, বুক, কাঁধ বা পায়ের হাড়ে অনুভূত হয় এবং সময়ের সাথে তীব্র হতে পারে।
পেটে ব্যথা ও ফোলাভাব
লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে প্লীহা (spleen) ও লিভার বড় হয়ে যেতে পারে। এতে পেটের বাম পাশে ভার অনুভব হতে পারে, কখনো হালকা ব্যথাও হতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা পেটের মাঝামাঝি অংশেও ছড়ায় এবং ক্ষুধা মন্দা, দ্রুত পূর্ণ অনুভূতির কারণ হতে পারে।
মাথাব্যথা
যদি ক্যান্সার স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে বা রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) চরম আকার ধারণ করে, তাহলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে একটানা মাথাব্যথা হতে পারে। এই মাথাব্যথা সাধারণ প্যারাসিটামল খেলে সাড়ে না এবং মাঝে মাঝে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতাও দেখা যায়।
বুক ধড়ফড় এবং বুকে চাপজনিত ব্যথা
অ্যানিমিয়ার কারণে হৃৎপিণ্ড অধিক পরিশ্রম করতে বাধ্য হয়, ফলে বুক ধড়ফড়, বুকের মাঝখানে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। অনেকেই একে হৃদরোগ ভেবে বিভ্রান্ত হন।
অন্যান্য উপসর্গ
-
ঘন ঘন জ্বর ও ঘাম (বিশেষ করে রাতে)
-
সহজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
-
ওজন হ্রাস
-
ত্বকে নীলচে দাগ বা ফুসকুড়ি
-
সহজে রক্ত পড়া বা নাক থেকে রক্ত যাওয়া
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি উপরোক্ত উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক একটানা কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা দেয় এবং ব্যথার সঙ্গে ক্লান্তি, জ্বর বা ওজন হ্রাস দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ হেমাটোলজিস্ট বা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
নির্ণয় ও পরীক্ষা
ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য সাধারণত নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়:
-
সিবিসি (CBC - Complete Blood Count)
-
পেরিফেরাল ব্লাড স্মিয়ার
-
বোন ম্যারো টেস্ট
-
ইমিউনোফেনোটাইপিং
-
সিটি স্ক্যান ও এমআরআই
উপসংহার
ব্লাড ক্যান্সারের উপসর্গগুলো অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হলেও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে অবহেলা করা উচিত নয়। সময়মতো রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসা সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
নিজেকে ও প্রিয়জনকে সচেতন রাখুন, সময়মতো চিকিৎসা নিন।
ইমরান