
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মার্কিন বিমান হামলার জবাবে ইরানের সম্ভাব্য সাইবার হামলা ঠেকাতে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কংগ্রেসের এক শুনানিতে তিনি বলেন, এ ধরনের আক্রমণের আশঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
পাওয়েল বলেন, “আমরাও একটি সম্ভাব্য টার্গেট, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা সতর্ক রয়েছি। আপনি এই বিষয়টি তুলেছেন, সেটি একান্তই সঠিক, কারণ এটি একটি বড় ইস্যু।”
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে। ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে তারা সাইবার অনুপ্রবেশ বা হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে।
সাইবার হামলা প্রতিহত করার জন্য ফেডারেল রিজার্ভের কাছে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সক্ষমতা রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেছেন পাওয়েল। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকার সাধারণত এই খাতে প্রচুর ব্যয় করে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে কখনোই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, কারণ যারা আক্রমণ করে, তারা প্রতিনিয়ত আরও দক্ষ হয়ে উঠছে।”
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এরপর থেকেই ইরান ও তাদের মিত্রদের সাইবার পাল্টা আঘাতের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ব্যবসায়িক খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে সতর্ক করা হয়েছে যে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামোতে হামলার চেষ্টা করতে পারে।
যদিও এখন পর্যন্ত ওই হামলার সরাসরি জবাবে কোনও সাইবার আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি, তবে সোমবার কাতারে একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
এদিকে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে একপ্রকার অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার ভোরে তিনি ঘোষণা দেন যে, তিন পক্ষই নতুন করে সংঘাত থেকে বিরত থাকবে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ইরান ও ইসরায়েল চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
ট্রাম্প বলেন, “আমি ইসরায়েলের ওপর খুশি নই, ইরানকেও সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে না।”
ইরানের সাইবার আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাতের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাইবার ইউনিটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি কোম্পানি ও চার ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনে। অভিযোগ ছিল, তারা ফিশিং ও ম্যালওয়্যার হামলার মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে লক্ষ্য করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার মন্ত্রণালয় ওই চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এক ঘটনায় তারা প্রায় দুই লাখ কর্মচারীর ইমেইল অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের সাইবার হামলার ইতিহাস আরও পুরোনো। ২০১৬ সালে এফবিআই সাত ইরানির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যারা ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নিউ ইয়র্কের একটি বাঁধ ও প্রায় ৫০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে বটনেট এবং ম্যালিশিয়াস কোড ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছিল।
সাইবার যুদ্ধের এই প্রতিযোগিতায়, বিশেষ করে জিওরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে, আর্থিক খাত এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি।
সূত্র:https://tinyurl.com/ynyzct98
আফরোজা