
নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতার অন্যতম কারণ। রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় ‘ওয়াক্সি’ বা মোমের মতো চর্বিজাতীয় পদার্থ জমলে তা রক্তনালিতে plaque তৈরি করে। এর ফলে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলেই প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে এমন পাঁচটি খাবারের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে তা কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ওটমিল
সকালের নাশতায় এক বাটি ওটমিল হতে পারে কোলেস্টেরল কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায়। ওটসে রয়েছে ‘বেটা-গ্লুকান’ নামক দ্রবণীয় আঁশ যা কোলেস্টেরলকে অন্ত্রে আটকে দেয় এবং রক্তে শোষিত হওয়া থেকে বাধা দেয়। নিয়মিত ওটমিল খেলে এলডিএল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। বিশেষ করে স্টিল কাট বা রোলড ওটসের সঙ্গে ফল মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো হচ্ছে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর চর্বিজাতীয় খাবারগুলোর একটি। এতে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এলডিএল কমিয়ে এইচডিএল বা ‘ভাল’ কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি অ্যাভোকাডো খেলে অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন ব্যক্তিদের এলডিএল হ্রাস পায়। অ্যাভোকাডোতে আঁশ ও উদ্ভিজ্জ স্টেরলও থাকে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। স্যালাড, স্যান্ডউইচ বা টোস্টে সহজেই যুক্ত করা যায় এই উপাদানটি।
বেগুন
কম ক্যালোরি ও বেশি আঁশে সমৃদ্ধ বেগুন কোলেস্টেরল কমাতে দারুণ উপকারী। বিশেষত বেগুনের বেগুনি রঙে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘নাসুনিন’ রক্তনালিকে সুরক্ষা দেয় এবং কোলেস্টেরল বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। প্রাণীদেহে পরিচালিত গবেষণায় বেগুনের নিয়মিত গ্রহণে এলডিএল হ্রাস পাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। বেগুন গ্রিল করে, ভেজে বা বাবাঘানুশ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
গাজর
মিষ্টি স্বাদের এই সবজিটি কেবল দৃষ্টিশক্তির জন্য নয়, হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। গাজরে রয়েছে ‘পেকটিন’ নামের দ্রবণীয় আঁশ, যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়া গাজরের বিটা-ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। গাজরের স্টিক কেটে হিউমাস ডিপের সঙ্গে খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হতে পারে।
বাদাম (আমন্ড)
প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মুষ্টিমেয় আমন্ড থাকলে তা হৃদযন্ত্রের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। আমন্ডে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, আঁশ এবং উদ্ভিজ্জ স্টেরল। ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৪৫টি আমন্ড (প্রায় ২ আউন্স) খেলে রক্তে কোলেস্টেরল ও এলডিএল-এর মাত্রা কমে এবং অন্ত্র ও হৃদযন্ত্রের সার্বিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘ই’ ধমনিকে রক্ষা করে। স্ন্যাকস হিসেবে অথবা দই বা স্যালাডে ছিটিয়ে আমন্ড খাওয়া যেতে পারে।
ওষুধ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা আপনাকে দীর্ঘজীবী রাখতে পারে—এই বার্তাই দিচ্ছে আপনার প্লেটের প্রতিদিনের খাবার।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/5-proven-health-benefits-of-adding-olive-oil-to-the-diet/photostory/122019479.cms
সজিব