
দিনের পর দিন কম্পিউটার স্ক্রিন, স্মার্টফোন বা টিভির দিকে চেয়ে থাকা আধুনিক জীবনের এই বাস্তবতা আমাদের চোখের ওপর সৃষ্টি করছে বিশাল চাপ। ক্লান্ত, অতিরিক্ত ব্যবহার করা চোখকে আমরা যতক্ষণ না অস্বস্তি টের পাই, ততক্ষণ অবহেলা করেই চলি। অথচ নিয়মিত কিছু সহজ ব্যায়ামই হতে পারে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য একটি চমৎকার উপায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু প্রাকৃতিক চোখের ব্যায়াম নিয়মিত করলে চোখের পেশির কার্যকারিতা বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং মনোযোগ ও ফোকাস করার ক্ষমতাও বাড়ে। আজ জানুন এমনই ১০টি কার্যকর চোখের ব্যায়ামের কথা, যেগুলো প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে মাত্র কয়েক মিনিট ব্যয় করেই আপনি করতে পারবেন।
১. আই পালমিং (Eye Palming)
চোখ দু’টি বন্ধ করে উষ্ণ হাতের তালু দিয়ে হালকা চাপে ঢেকে রাখুন। এ সময় গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং চোখকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিন। দিনে কয়েকবার এটি করলে চোখের ক্লান্তি দূর হয় এবং মানসিক প্রশান্তিও মেলে।
২. নিকট-দূর ফোকাস (Near-Far Focus)
চোখের ফোকাস উন্নত করতে এই ব্যায়াম খুবই কার্যকর। প্রথমে চোখের সামনে ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে একটি বস্তু ধরুন এবং তাকিয়ে থাকুন। তারপর সেই দৃষ্টিকে দূরের কোনো বস্তুতে সরান। এইভাবে কয়েকবার পরিবর্তন করুন। এটি চোখের পেশি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. ক্লক ঘড়ির কাটার মতো ঘুরানো (Eye Clock Rotation)
কল্পনা করুন আপনার চোখের সামনে একটি বড় ঘড়ি রয়েছে। ধীরে ধীরে চোখের মণি ১২টা থেকে শুরু করে ঘড়ির কাটার মতো ঘুরান। এরপর উল্টো দিকে একইভাবে করুন। এটি চোখের নমনীয়তা বাড়ায়।
৪. পেনসিল পুশ-আপ (Pencil Push-Ups)
একটি পেনসিল ধরে সেটিকে ধীরে ধীরে নাকের দিকে আনুন এবং চোখ দিয়ে সেটিকে ফোকাস করুন যতক্ষণ না এটি অস্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর আবার দূরে নিয়ে যান। এই ব্যায়াম চোখের ফোকাস উন্নয়নে সাহায্য করে।
৫. ব্লিংকিং ব্রেকস (Blinking Breaks)
কম্পিউটারে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই চোখের পলক ফেলতে ভুলে যান। প্রতি ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য দ্রুত পলক ফেলুন। এটি চোখকে আর্দ্র রাখে এবং ক্লান্তি কমায়।
৬. আই স্কুইজ-রিলিজ (Eye Squeeze-Release)
চোখের পাতা শক্ত করে চেপে ধরুন কয়েক সেকেন্ডের জন্য, তারপর হঠাৎ ছেড়ে দিন। এটি চোখের পেশিকে বিশ্রাম দেয় এবং রক্ত চলাচল উন্নত করে।
৭. ফিগার এইট ট্রেসিং (Figure 8 Tracing)
কল্পনায় চোখের সামনে একটি বিশাল ৮ অঙ্ক আঁকুন। একবার ডানে, আবার বামে। এটি চোখের কো-অর্ডিনেশন ও পেশির নমনীয়তা বাড়ায়।
৮. ঠান্ডা চামচে চোখ ঘোরানো (Rolling a Cold Spoon)
ফ্রিজে রাখা দুইটি স্টিলের চামচ চোখের নিচে ঘোরাতে পারেন। এটি চোখের ফোলাভাব কমায় এবং আরাম দেয়।
৯. নিঃশ্বাসের সঙ্গে দৃষ্টিবিভাজন (Gaze Shifting with Breath)
নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে একই সঙ্গে দৃষ্টি একপাশে নিন। তারপর শ্বাস ছাড়ার সময় দৃষ্টি অন্যপাশে সরান। এটি মানসিক প্রশান্তির সঙ্গে চোখের পেশিও শিথিল করে।
১০. মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে থাকা (Candle Gazing)
একটি স্থির মোমবাতির শিখার দিকে তাকিয়ে থাকুন যতক্ষণ না চোখ জল চলে আসে। এরপর চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। যোগশাস্ত্রে এটির নাম ‘ত্রাটক’, যা মনঃসংযোগ এবং চোখের স্বচ্ছতায় সাহায্য করে।
চোখের যত্ন মানেই শুধু চশমা বা ওষুধ নয়, বরং কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসই পারে দৃষ্টিশক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে রক্ষা করতে। উপরের ব্যায়ামগুলো নিয়মিত চর্চা করলে চোখের ক্লান্তি যেমন দূর হবে, তেমনি বাড়বে দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা ও ফোকাস ক্ষমতা। তাই চোখের প্রতি সচেতনতা হোক প্রতিদিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এখন থেকেই শুরু করুন এই ১০টি ছোট্ট অভ্যাস, আপনার দৃষ্টি থাকবে সতেজ ও সুস্থ।
সূত্র:https://tinyurl.com/4s3ywb3m
আফরোজা