
ছবি: সংগৃহীত।
নবজাতকের প্রস্রাব ও পায়খানার অভ্যাস নিয়ে অনেক অভিভাবকই উদ্বিগ্ন থাকেন। এই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, “জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় নবজাতক প্রস্রাব না করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ অনেক সময় শিশু ২৪ ঘণ্টা পরও প্রথম প্রস্রাব করে। তবে প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি পায়খানা না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
তিনি জানান, শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়া শিশু দিনে ৫-৬ বার পর্যন্ত প্রস্রাব করে, এটি একেবারে স্বাভাবিক। একইভাবে, মায়ের দুধ খাওয়া শিশুদের পায়খানাও সাধারণত পাতলা ও সোনালি হলুদ রঙের হয়, যার সঙ্গে কখনো কখনো 'আম' দেখা যায়। তিনি বলেন, “অনেক সময় এই ধরনের পায়খানা দিনে ১০-১৫ বারও হতে পারে, যা মা-বাবাকে উদ্বিগ্ন করলেও এটা একান্ত স্বাভাবিক। টিনের দুধ খাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে পায়খানা তুলনামূলকভাবে শক্ত এবং অনিয়মিত হয়।”
শিশু বড় হয়ে গেলে যখন অন্যান্য খাবার ও পানি খাওয়া শুরু করে, তখনও প্রতিদিন অন্তত ৫-৬ বার প্রস্রাব এবং ১-২ বার পায়খানা হওয়া স্বাভাবিক বলে মত দেন ডা. মোল্লা। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “অনেক সময় মা-বাবা বলতে পারেন না তাদের শিশু দিনে কয়বার প্রস্রাব করছে, কারণ শিশুরা নিয়মিত প্যাম্পার পরে থাকে। এতে শিশুর তরল গ্রহণ ঠিক আছে কিনা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।”
অধ্যাপক মোল্লা আরও বলেন, বর্তমানে শিশুদের মধ্যে অনিয়মিত ও শক্ত পায়খানার প্রবণতা বেড়েছে। “অনেক শিশু সপ্তাহে মাত্র একবার পায়খানা করে, যা হয় অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং কখনো কখনো রক্ত পর্যন্ত বের হয়।”
এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন শিশুর খাদ্যাভ্যাসকে। “আজকালকার শিশুরা শাক-সবজি খায় না, মাংস বেশি খায়, টিনের দুধ বা বাজারে তৈরি অতিমিহি খাবার খায়—যেগুলো সহজে হজম হয় না এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়।”
তিনি পরামর্শ দেন, শিশুর সুস্থ হজম প্রক্রিয়া ও মলমূত্র স্বাভাবিক রাখতে সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি খাওয়ানো উচিত। প্রয়োজনে অভিভাবকদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
শিশুর সঠিক শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে মলমূত্রের নিয়মিততা গভীরভাবে জড়িত। অভিভাবকদের সচেতনতা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই শিশুদের এসব সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।
মিরাজ খান