ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

কুয়াকাটার প্রাকৃতিক স্বর্গ, সৌন্দর্য ডানা মেলেছে গঙ্গামতির চরে

আবুল হোসেন রাজু, কুয়াকাটা, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৩৭, ২৫ জুন ২০২৫

কুয়াকাটার প্রাকৃতিক স্বর্গ, সৌন্দর্য ডানা মেলেছে গঙ্গামতির চরে

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি হিসেবে খ্যাত সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বপ্রান্ত ঘেঁষে অবস্থিত এক অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক স্থান—গঙ্গামতির চর (গঙ্গামতি লেক)। ট্যুরিস্ট গাইড ও স্থানীয়দের কাছে এটি সূর্যোদয়ের পয়েন্ট নামেও পরিচিত।

এখানে নানা প্রজাতির গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যে ভরা এক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে। সুন্দরবনের অংশবিশেষ হওয়ায় গঙ্গামতির চর প্রাকৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কেওড়া, শৈলা, গেওয়া, গোরান, কড়ই, বাইন, ঝাউগাছ, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ এই চরে শোভা পাচ্ছে। একসময় এটি মূল সুন্দরবনের অংশ ছিল, তবে বর্তমানে এটি সুন্দরবন থেকে বিচ্ছিন্ন।

 

গঙ্গামতি পয়েন্টে দাঁড়ালে প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের এক টুকরো অনুভব করা যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা।

বিশেষ করে সূর্যোদয়ের সময় গঙ্গামতির চরের সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বেড়ে যায়। সোনালি সূর্যকিরণ সবুজ প্রকৃতিকে নতুনভাবে রাঙিয়ে তোলে, যা পর্যটকদের মনে অপার্থিব অনুভূতি সৃষ্টি করে।

গঙ্গামতির চর কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছাতে হবে। সড়ক ও নদীপথ—উভয় পথেই যাওয়া যায়।

ড়কপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুর কারণে বর্তমানে সময় কমে ৬–৭ ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব।
নন-এসি বাস: সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস (ভাড়া: ৭৫০–৯০০ টাকা)।

এসি বাস: গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ (ভাড়া: ১১০০–১৬০০ টাকা)।

যাত্রা শুরু করতে পারেন সায়েদাবাদ, আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ বা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে।

নদীপথে সদরঘাট নৌ টার্মিনাল থেকে পটুয়াখালী, আমতলী, কলাপাড়া বা বরিশালগামী লঞ্চে যাওয়া যায়। সাধারণত সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে।

 

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে গঙ্গামতির চর পূর্ব দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। মোটরসাইকেল, ভ্যান বা ইজিবাইকে করে সেখানে যাওয়া যায়। ভোরে রওনা দিলে সূর্যোদয় দেখে একইদিনে কুয়াকাটায় ফিরে আসা সম্ভব।

কোথায় থাকবেন?

কুয়াকাটায় থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে।

সরকারি আবাসন:

পর্যটন হলিডে হোমস, ইয়ুথ ইন, এলজিইডি রেস্ট হাউজ, সড়ক ও জনপথ রেস্ট হাউজ, পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো।

 

বেসরকারি হোটেল ও রিসোর্ট:

নীলাঞ্জনা, হোটেল আমান, সাগর কন্যা হোটেল, হোটেল গ্রেভার ইন, সি ভিউ, সমুদ্র বাড়ি রিসোর্ট, ইলিশ পার্ক, সিকদার রিসোর্ট, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড, হোটেল বিচ হ্যাভেনসহ প্রায় দুই শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন?

গঙ্গামতির চরের কাছাকাছি লেক পার হলে ছোট ছোট ফুড শপে তাজা সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া ভাজি ও বিখ্যাত খিচুড়ি পাওয়া যায়।
কুয়াকাটায় ভালো মানের খাবারের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু রেস্টুরেন্ট হলো:
জিরো পয়েন্টের বৈশাখী, পৌষী, সী গার্ল, আমান, পায়রা, বরিশাল গেট, তাওয়া, রুচিতা প্রভৃতি।


ভ্রমণের আদর্শ সময়

নভেম্বর থেকে মার্চ গঙ্গামতির চর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য আদর্শ সময় এটি।

শেষ কথায়:

গঙ্গামতির চর নিঃসন্দেহে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য। কুয়াকাটার কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে নির্জন এই চর আপনাকে প্রকৃতির গভীরতার ছোঁয়া দেবে।

সুন্দরবনের স্বাদ, সাগরের ছোঁয়া এবং প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ মিলে এটি হয়ে উঠেছে এক স্বপ্নীল ভ্রমণস্থল। তাই সময় পেলে একবার ঘুরে আসতেই পারেন গঙ্গামতির চর থেকে—এক টুকরো প্রাকৃতিক স্বর্গরাজ্য।

তাসমিম

×