ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ত্রিভুজ পরকীয়ার দ্বন্দ্বে মাইক ম্যান আলমগীর হত্যা, আসামি তপন গ্রেফতার

রোমানা বিলকিস, শাহরাস্তি, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২৫ জুন ২০২৫

ত্রিভুজ পরকীয়ার দ্বন্দ্বে মাইক ম্যান আলমগীর হত্যা, আসামি তপন গ্রেফতার

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে আলোচিত মাইক ম্যান আলমগীর হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি তাজুল ইসলাম তপনকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে, সোমবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ খানের কসাইবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাসার।

তিনি আরও জানান, তপন সেখানে ভ্যানগাড়িতে জুতা বিক্রেতা সেজে আত্মগোপনে ছিলেন।

তপন চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের খিতারপাড় গ্রামের শামছুল হকের পুত্র। তিনি এলাকায় একজন কুখ্যাত বখাটে হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গত ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলার মনিপুর গ্রামের একটি প্রবাসীর বাড়ির ছাদে ডেকে নিয়ে মো. আলমগীর (৩৬) নামের এক যুবককে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত আলমগীর একই গ্রামের বাসিন্দা ও সোনিয়ার প্রতিবেশী। এলাকায় তিনি “মাইক ম্যান” নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি কারো মৃত্যু হলে জানাজার সংবাদ মাইকে প্রচার করতেন।

হত্যাকাণ্ডের রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলমগীরের মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ঘটনাস্থল থেকে দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ, যার একটি ছিল তপনের। এ সূত্র ধরেই তদন্তে অগ্রগতি হয়।

ঘটনার রাতেই ওই বাড়ির মালিক আবুল হোসেন মানিকের স্ত্রী খোদেজা বেগম ও মেয়ে সোনিয়াকে আটক করে পুলিশ।

সোনিয়ার দুই দিনের রিমান্ডে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য—আলমগীরের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল।

সোনিয়ার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তপনের সঙ্গেও তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং আলমগীর যেন এই সম্পর্কে বাধা না হয়, সে কারণে তারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঘটনার পর থেকে মামলার মূল হোতা তপন পলাতক ছিলেন। অবশেষে তিন মাস পর প্রযুক্তির সহায়তায় দক্ষিণ খান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে শাহরাস্তি থানা পুলিশ।

কচুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আ. হাই জানান, “তপনকে গ্রেফতারের পর থানায় এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।”

আলমগীর হত্যাকাণ্ডের পর শাহরাস্তি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী ইতোমধ্যে মানববন্ধন করে তপনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

স্থানীয়ভাবে সোনিয়ার একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

শাহরাস্তির এই আলোচিত হত্যা মামলায় প্রধান আসামি তপন গ্রেফতার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও অন্যান্য জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সানজানা

×