ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসকের সংস্কৃতিচর্চা ও পাঠপ্রেমের অনন্য উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩০, ২৫ জুন ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসকের সংস্কৃতিচর্চা ও পাঠপ্রেমের অনন্য উদ্যোগ

ছবি: জনকণ্ঠ

লক্ষ্মীপুরে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে জেলা প্রশাসনের সরব ও সংবেদনশীল অংশগ্রহণের আরেকটি প্রমাণ পাওয়া গেল ২৪ জুন (মঙ্গলবার)। এদিন, লক্ষ্মীপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারে “স্থানীয় কর্নার” শিরোনামে জেলার লেখক ও গবেষকদের রচনাবলি নিয়ে একটি বিশেষ সংগ্রহশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

 

 

এই উদ্যোগের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন প্রমাণ করেছে যে, জ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চায় প্রশাসনও হতে পারে এক নির্ভরযোগ্য ও অগ্রণী সহযাত্রী। ‘স্থানীয় কর্নার’ মূলত লক্ষ্মীপুর জেলার স্থানীয় লেখক, গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের একটি সংরক্ষিত দলিল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব রাজীব কুমার সরকার বলেন,

“একটি অঞ্চলের সংস্কৃতি তার মানুষের কলম ও কণ্ঠে রচিত হয়। সেই রচনাসমূহ সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের শিকড় সম্পর্কে অবহিত থাকতে পারবে না।” তার এই বক্তব্য শ্রোতামণ্ডলীর মধ্যে গভীর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। নবীন লেখকেরা তাঁদের প্রকাশিত গ্রন্থ ‘স্থানীয় কর্নার’-এ তুলে দিয়ে সম্মানিত ও দায়িত্বশীল বোধ করেন।

 

 

প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই লক্ষ্মীপুরের পাঠাগার সংস্কৃতির উন্নয়নে নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারি গণগ্রন্থাগার আধুনিকায়ন, শিশু পাঠচত্বর স্থাপন, রিডিং কর্নার চালু, বই উৎসব আয়োজন, সাহিত্য পাঠচক্র গঠনসহ পাঠাভ্যাসকে উৎসাহিত করতে একাধিক কর্মসূচি তার পরিকল্পনার অংশ।

এছাড়া, ব্যক্তিগতভাবে তিনি পাঠ ও সাহিত্যচর্চায় যুক্ত রয়েছেন এবং প্রশাসনের অভ্যন্তরেও সহকর্মীদের মাঝে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে বরেণ্য কবি সুফিয়া কামালের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজনও করা হয়। এতে জেলা প্রশাসক বলেন, “সুফিয়া কামাল ছিলেন নারীমুক্তি ও মানবতার প্রতীক। তাঁর সাহিত্যকর্ম আমাদের সংস্কৃতির গভীর সৌন্দর্য তুলে ধরে।”এই বক্তব্যে জেলা প্রশাসকের সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

 

অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। রায়পুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, “পূর্বে লাইব্রেরিতে আসা মানেই ছিল কেবল পাঠ্যপুস্তকের পাঠ। কিন্তু ‘স্থানীয় কর্নার’ দেখে মনে হচ্ছে আমরাও সাহিত্যচর্চার অংশ হতে পারি।” লক্ষ্মীপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান তাঁর অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,

“একটি জেলার প্রকৃত পরিচয় তার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যেই নিহিত। জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার সে পরিচয়কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছেন। তিনি কেবল প্রশাসক নন, বরং একজন সংস্কৃতিসেবী ও সমাজদর্শী নেতৃত্ব।” জেলা প্রশাসনের এমন মানবিক ও চিন্তনশীল পদক্ষেপ লক্ষ্মীপুর জেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
 

ছামিয়া

×