কেনিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ২৫ জুন রাজধানী নাইরোবিসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামে। গত বছর আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৬০ জন নিহত হন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, গত বছর কর বৃদ্ধি ও তরুণদের জন্য দুর্বিষহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৬০ জন নিহত হন। বুধবার, এই সহিংসতার সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিনের বার্ষিকীতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আহ্বান জানায় নিহতদের পরিবার ও অধিকারকর্মীরা।
রাজধানী নাইরোবির প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে পুলিশের ব্যারিকেড এবং razor wire দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় সরকারি ভবনগুলো।
বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই তরুণ পুরুষ, যাঁরা কেনিয়ার পতাকা ও নিহতদের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে “রুটো হটাও” স্লোগান দিচ্ছিলেন। প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির বিরোধিতায় গত বছরের তরুণ-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।
২৪ বছর বয়সী ইভি নামের এক তরুণী AFP-কে বলেন, “আমি এখানে এসেছি কেনিয়ার তরুণ হিসেবে প্রতিবাদ জানাতে। এটা আমাদের অধিকার। যাদেরকে গত বছর হত্যা করা হয়েছে, তাদের জন্য এসেছি। পুলিশ আমাদের রক্ষা করার কথা, অথচ ওরাই আমাদের হত্যা করে।”
বিরোধী দল জুবিলি পার্টির যুব শাখার সভাপতি অ্যাঞ্জেল মবুথিয়া বলেন, “২৫ জুন আমাদের তরুণদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দিনে তারা তাদের মতো দেখতে, তাদের ভাষায় কথা বলা মানুষদের হারিয়েছে… যারা সুশাসনের জন্য লড়াই করছিল।”
এই বার্ষিকী এমন এক সময় এসেছে যখন পুলিশের সহিংসতা নিয়ে জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। চলতি মাসের শুরুতে, ৩১ বছর বয়সী ব্লগার ও শিক্ষক আলবার্ট ওজওয়াংকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়। তিনি এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে সমালোচনা করেছিলেন।
ওজওয়াং হত্যাকাণ্ডে মঙ্গলবার ছয়জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আনা হয়, যাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তারা সবাই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতে পারবে যদি তা “শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র” হয়। তবে গত সপ্তাহে, একদল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীর ওপর “গুণ্ডা” নামে পরিচিত মোটরসাইকেল আরোহী একদল অস্ত্রধারী হামলা চালায়, যাদেরকে পুলিশ সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের দূতাবাসগুলো যৌথ বিবৃতি দিয়ে সকল পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানায়।
২০২২ সালে ক্ষমতায় এসে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। কিন্তু তার আমলে চলমান স্থবিরতা, দুর্নীতি ও কর বৃদ্ধিতে তরুণরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
গত বছরের আন্দোলনের ফলে রুটো একটি বিতর্কিত অর্থবিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেও, এরপরও বিরোধিতা থামেনি। এ বছর সরকার প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির পথ পরিহার করেছে।
তবে আন্দোলনকারীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে, গত বছরের আন্দোলনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি সরকার-বিরোধী ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন, যাদের অনেকেই এখনও ফেরেননি। অনেকেই অভিযোগ করছেন, রুটো সরকার যেন ৮০-৯০’র দশকের একনায়কতন্ত্রের যুগে ফিরে গেছে।
সূত্র - https://www.aljazeera.com/news/2025/6/25/thousands-rally-in-kenya-to-mark-anniversary-of-antitax-demonstrations
সানজানা
