
ছবি: সংগৃহীত
নাসা সম্প্রতি এমন এক ‘রহস্যময় দেয়াল’-এর কথা প্রকাশ করেছে, যা সৌরজগতের সীমান্তে অবস্থিত। এই দেয়াল কীসের? কেনইবা এটি বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে? মহাকাশবিজ্ঞানীদের ভাষায়, এটি এমন এক সীমারেখা যা আমাদের সৌরজগতকে বাইরের মহাজাগতিক প্রভাব থেকে আংশিকভাবে আলাদা করে রাখে।
বহু দশক ধরে রহস্যঘেরা সৌরসীমা
অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা জানতেন, সূর্য থেকে একধরনের কণিকা প্রবাহ নির্গত হয়—যাকে বলা হয় সোলার উইন্ড বা সৌরবায়ু। এই বায়ু সৌরজগতের চারপাশে একটি সুরক্ষামূলক বলয় তৈরি করে, যার নাম হেলিওস্ফিয়ার। কিন্তু এই বলয়ের ঠিক কোথায় শেষ, সেটা জানা ছিল অত্যন্ত কঠিন।
১৯৭৭ সালে নাসা দুটি মহাকাশযান—ভয়েজার ১ ও ২—পাঠায়, মূলত বৃহস্পতি ও শনি সম্পর্কে জানতে। কিন্তু কয়েক দশকের যাত্রা শেষে এই যানদুটি সৌরজগতের বাইরে পৌঁছে যায় এবং আমাদের জানান দেয় এক চমকপ্রদ তথ্য—হেলিওপজ নামে এক সীমান্ত, যা সূর্যজগতের এক প্রাকৃতিক প্রাচীর।
‘অদৃশ্য দেয়াল’ ঠিক কোথায়?
এই ‘দেয়াল’ আসলে হেলিওস্ফিয়ার ও আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান (interstellar space)-এর মধ্যকার একটি স্থানান্তর অঞ্চল। ভয়েজার ১ যখন ২০১২ সালে এবং ভয়েজার ২ যখন ২০১৮ সালে এই অঞ্চল অতিক্রম করে, তখন তাদের সেন্সরগুলো হঠাৎ করে সৌর কণিকার ঘনত্ব কমে যাওয়া এবং বাইরের মহাকাশ থেকে আগত কসমিক রশ্মির (cosmic rays) পরিমাণ বাড়ার বিষয়টি শনাক্ত করে।
এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, সৌর বায়ুর গতি সেখানে শূন্যে পৌঁছে যায় এবং বাইরের মহাবিশ্বের শক্তি সেখানে প্রবল হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা একে ‘এনার্জেটিক ওয়াল’ বলেও অভিহিত করেছেন।
হেলিওপজ-এর বাইরের শত্রুপূর্ণ জগৎ
এই ‘দেয়াল’ অতিক্রম করার পর ভয়েজার যানদ্বয় এমন এক অঞ্চলে প্রবেশ করে, যেখানে সূর্যের প্রভাব নেই। এখানে বিস্ফোরিত তারার কণিকা, উচ্চমাত্রার বিকিরণ ও নানা ধরণের গ্যালাকটিক তেজস্ক্রিয় কণিকা বিচরণ করে। ভয়েজার ১-এর সেন্সর দেখিয়েছে—এই অঞ্চলে কসমিক রশ্মির তীব্রতা অনেক বেশি, যা আমাদের সৌরজগতের ভেতরে কখনো দেখা যায় না।
গবেষণায় নতুন দিগন্ত
এই সীমান্ত আবিষ্কার শুধু সৌরজগতের সীমানা নয়, বরং আমাদের গ্রহ-নির্ভর সুরক্ষা বলয়ের ধারণাকেই নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে। এটি বুঝিয়ে দেয়—সূর্য শুধু আলো-তাপ নয়, বরং একটি মহাকাশীয় ঢালের মতো কাজ করে, যা বাইরের মহাবিশ্ব থেকে আসা ক্ষতিকর কণিকাগুলোর অনেকটাই আটকে রাখে।
ভয়েজার এখনও দিচ্ছে তথ্য
যদিও ভয়েজার ১ ও ২-এর বয়স ৪৭ বছর, তবু তারা এখনও পৃথিবীতে তথ্য পাঠাচ্ছে। তবে দূরত্বের কারণে এখন তা ধীরে আসে, শক্তিও সীমিত। তবু, প্রতিটি পাঠানো সংকেত মানব সভ্যতার জন্য এক একটি বিরল উপহার।
সৌরজগতের ‘দেয়াল’ কী বার্তা দেয়?
নাসার গবেষকরা বলছেন, এই ‘অদৃশ্য দেয়াল’ সৌরজগতের সীমানা নিয়ে আমাদের বহু পুরোনো ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। হেলিওস্ফিয়ারের বাইরের দুনিয়া আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং, অনিশ্চিত এবং রোমাঞ্চকর। আর ভয়েজার মিশন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—অজানার পেছনে ছুটে চলাই মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রেরণা।
সূত্র: https://3dvf.com/en/nasa-reveals-the-existence-of-a-mysterious-wall-at-the-edge-of-the-solar-system/
রাকিব