
ডেঙ্গু ও করোনা এই দুই বিপর্যয়ের সম্মিলিত কালো ছায়া জনজীবনে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ডেঙ্গু স্থানীয় প্রাকৃতিক জৈবিক চক্রের অংশ এবং করোনা বৈশ্বিক মহামারি। দুটি রোগের প্রকৃতি ভিন্ন হলেও জনজীবনে এর অভিঘাত প্রায় একই রকম। দুটি রোগেই রয়েছে আতঙ্ক, অসচেতনতা, স্বাস্থ্যসেবায় সীমাবদ্ধতা ও আর্থিক বিপর্যয়। তবে দুটি রোগই প্রতিরোধযোগ্য। ২০১৯ সালের শেষদিকে বিশ্বজুড়ে যখন করোনার ভয়াল থাবা পড়েছিল তখন ঝাঁকে ঝাঁকে লাশের ওপর লাশ পড়েছিল। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, টিকা কর্মসূচি, কর্মসংস্থান হারানো, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকা, মানসিক চাপ সবই ছিল তখনকার পরিণতি। সে সময় স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, নতুন হাসপাতাল ও আইসোলেশন কেন্দ্র গড়ে তোলা ছিল প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিল দুর্বলতা যেমন- পর্যাপ্ত আইসিইউ, দক্ষ চিকিৎসক, পর্যবেক্ষণ ও তথ্য ব্যবস্থাপনার অভাব ছিল। গ্রামের মানুষ ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে টিকা পৌঁছাতে বিলম্ব দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে ডেঙ্গুর মতো নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ প্রতিরোধে সরকার বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বর্ষা মৌসুম এলেই ডেঙ্গু বাড়বে, এটি পূর্বানুমেয় হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে সমন্বয়ের অভাব, কীটনাশক কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, মশা নিধন কর্মসূচির স্থবিরতা এবং জনবল সংকট। সব মিলে শহরবাসী পড়ছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। বর্ষা এলেই এডিস মশার বংশ বিস্তার শুরু হয়। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু। করোনা সংক্রমণের হার কম কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তা হতে পারে : সচেতনতামূলক গণপ্রচারণা। ওষুধ, অক্সিজেন ও হাসপাতাল সুবিধা নিশ্চিতকরণ। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর এবং নজরদারিসম্পন্ন কর্মসূচি। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি বন্ধ করা। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া। তবে এককভাবে সরকারের পক্ষে করোনা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়, যদি জনগণ সচেতন না হয়। উপেক্ষা বা দায় চাপিয়ে নয়, এক সঙ্গে জনগণ ও সরকার সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অতীত আমাদের শিখিয়েছে সংকটের মুখে জাতি ঐক্য হলে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব। তাই আতঙ্ক নয় সতর্কতা, অবহেলা নয় সচেতনতা। করোনা প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ, মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ডশেক না করা ও সচেতনতা অপরিহার্য। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানির নিষ্কাশন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয়তা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতার অভাব এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আমাদের সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখনই সময় ডেঙ্গু ও করোনার বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত, বহুমাত্রিক লড়াই গড়ে তোলা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। ব্যক্তি সচেতনতাই হোক ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধের প্রথম ঢাল।
কিশোরগঞ্জ থেকে
প্যানেল