পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্লাস্টিক এখন হুংকার দিচ্ছে হয় আমরা থাকব, না হয় তোমরা থাকবে। দুটো একসঙ্গে থাকা যাবে না। প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে। 
বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক পরিবেশের বিষ। এটা কেবল মানুষ নয়, পৃথিবীর সকল প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। পৃথিবীতে প্রতিদিন মানুষ বাড়ছে বাংলাদেশেও বাড়ছে, এর সঙ্গে বাড়ছে জনপ্রতি প্লাস্টিকের ব্যবহার। আসুন, আমরা আজ থেকে মনে মনে ঠিক করি, প্লাস্টিক বর্জন করব।’
পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে হলে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারলে আমরা সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারব।’
পরে প্রধান উপদেষ্টা অনুষ্ঠানস্থলে একটি সোনালু গাছ লাগিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা এর ব্যবহার বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিক যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একটা দিন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জন করে, তাহলে ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কঠিন এ পথে এগুনো যাবে না।
দূষণ রোধে কেবল পলিথিন বর্জন নয়, পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করার প্রয়োজন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দৈনন্দিন জীবনযাপনে (লাইফস্টাইল) পরিবর্তন ছাড়া সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয় অবধারিত। পরিবেশ সুরক্ষার বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুদ্ধ-বিগ্রহ আমাদের সামনে চ্যাঔেব্ধ তৈরি করেছে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল না মিলিয়ে উল্টোপথে চলছে মানুষ।
অন্তর্বর্তী সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এ কথা উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সেটি বাস্তবায়ন করলে বন্যপ্রাণী ফিরে আসবে বনে। নতুন প্রজন্ম দূষণমুক্ত শহর দেখতে পারবে। তরুণ প্রজন্মের অসীম শক্তি জুলাইয়ে দেখেছে। তরুণরাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ দেখার স্বপ্ন গড়ে তুলেছে। তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের সবচেয়ে সৃজনশীল। তাই তাদের জলবায়ু মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাক না থাকায়, পৃথিবীর জলাশয়গুলো পলিথিন ও প্লাস্টিকে ছেয়ে গেছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ছে। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যার জন্ম আছে মৃত্যু নেই। পৃথিবীর সব কিছুর মৃত্যু আছে, তার মৃত্যু নেই। এসব ক্রমাগত বাড়ে, ফলে তা সবকিছু জয় করে ফেলে। আমরা দিবস উদযাপন করে ঘরে ফিরে যাব, যথারীতি প্লাস্টিক ব্যবহার করব। তাই আমরা যদি আমাদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করি, এই যুদ্ধে সামগ্রিকভাবে মানুষের পরাজয় অবধারিত। সে জন্য এর থেকে কীভাবে আমরা বের হবো সেটা হলো আজকের আলোচ্য বিষয়।