ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

জনস্বাস্থ্য সচেতনতা

মাইফুল জামান ঝুমু

প্রকাশিত: ১৮:৪১, ২৫ জুন ২০২৫

জনস্বাস্থ্য সচেতনতা

বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত আর আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু ও করোনা। সম্প্রতি ডেঙ্গু আর করোনার প্রকোপ যেন এক ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। জরিপ অনুযায়ী, ‘চলতি বছরে করোনায় ৮ জন এবং  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ৩৩১ জন এবং ডেঙ্গুতে ছয় হাজার ৯২৬ জন।’ সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে’। প্রতিবছর বর্ষা এলেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনার নব সংক্রমণ  যেন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কাজেই এ আতঙ্ক  থেকে বাঁচতে জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রিক সচেতনতা আবশ্যক।  ২০২৩ সাল থেকে ডেঙ্গুজনিত প্রাণহানিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। কাজেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এডিস মশার লার্ভা থেকে ডেঙ্গু মশা যেন তৈরি না হয়  সেজন্য সারা দেশের রাস্তাঘাট, স্কুল-প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরে এডিস নিধন কর্মসূচি নেওয়া উচিত। ব্রুটো ইনডেক্সের মানদণ্ড অনুযায়ী লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই আগে থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বাড়ি ও আশপাশে জমে থাকা পানি ও জলাধার পরিষ্কার করে এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে হবে। সাধারণত বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু চিকিৎসায় যতটা উন্নত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ততটাও উন্নত না। ফলে গ্রামের অনেক রোগী ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার আগেই ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে। তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পরীক্ষার পর্যাপ্ত ফ্লুইড সরবরাহ এবং কীটতত্ত্ববিদ ওষুধের পরিবর্তন করে উন্নতমানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে যাতে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে রোগীর ভিড় না হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের গবেষকদের মতে, ‘সম্প্রতি এক্সএফজি ও এক্সএফসি নামে করোনার দুটি নতুন ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। যা করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রণের জেএন-১ ধরনের উপধরন। কাজেই এ শক্তিশালী ধরন সংক্রমণের আগেই আমাদের সচেতন হতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরামর্শগুলো যেমন : কমপক্ষে সাতবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া, নাকমুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা, আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকা, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ না করা, হাঁচি কাশির সময় বাহু, টিস্যু অথবা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখা ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। এছাড়াও দেশের স্থল,  নৌ ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত, দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিসমূহে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে নন-টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হোস্টেল ও হলগুলোতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদের ছুটি শেষে সবাই আবাসিক হলে প্রবেশের সময় ডিজিটাল  হেল্ড থার্মোমিটারে নন টাচ টেকনিকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা নির্ণয় করা উচিত। চিকিৎসাকার্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস, সংক্রমণ প্রতিরোধী পোশাক নিশ্চিত করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতসহ অন্যান্য সংক্রমিত দেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপরি, ডেঙ্গু ও করোনা দুটো প্রতিরোধে হাসপাতালকেন্দ্রিক সচেতনতার চেয়ে জনস্বাস্থ্যকেন্দ্রিক সচেতনতা  বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জনগণ সবাইকে একযোগে সচেতন হতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

প্যানেল

×