পরিবেশ দিবস : জীবন ও প্রকৃতির যৌথ উৎসব

জীবন এক দীর্ঘপথের যাত্রা- যার প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি নিশ্বাসে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির ঋণ। এই ঋণ কেবল বায়ু, জল বা আলো-ছায়ার নয়; এটি এক অস্তিত্বগত সম্বন্ধ, যা মানুষ ও প্রকৃতিকে অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে যুগ যুগ ধরে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই সম্পর্কের সূক্ষ্মতা ও তাৎপর্য। এটি নিছক পরিবেশ সংরক্ষণের আহ্বান নয়, বরং এক অন্তর্দর্শনের অনুরণন- যেখানে আমরা প্রতিফলিত হই নিজের ভেতরে। প্রশ্ন করি, আমরা প্রকৃতির কতটা নিকটস্থ, আর কতখানি দূরে সরে গেছি নিজ অস্তিত্ব থেকে?

এক সময় মানুষ প্রকৃতিকে কেবল আশ্রয় নয়, আত্মীয় জ্ঞান করত। গাছের ছায়ায় সে শুধু বিশ্রাম নিত না; সেখানে রচে যেত গান, মন্ত্র, আর প্রার্থনা। নদী ছিল শুধু জলধারা নয়, সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

আজ, আমরা সেই গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলি, নদীর মুখে গেঁথে দিই কংক্রিটের নিশ্বাসরুদ্ধ স্থাপনা। এটি শুধু প্রকৃতির ওপর নিপীড়ন নয়, আমাদের নিজের আত্মার এক নিঃশব্দ সংকেত।

পরিবেশ দিবস এক গভীর অনুরোধ- চলুন, আমরা আবার ভাবি- সহাবস্থান কি কেবল সহনশীলতা? না কি এটি এক পরম সৌন্দর্যের অনুশীলন?

এই দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বৃক্ষরোপণ একটি প্রতীক; আরও জরুরি, মনরোপণ- একটি নতুন মনোভাবের, যেখানে প্রকৃতি আর মানুষ পৃথক সত্তা নয়, বরং একটি পরস্পরনির্ভর জীবনতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিটি সংকেত, বনাঞ্চলের হ্রাস, বায়ুদূষণের উচ্চমাত্রা- সবই যেন আমাদের নিজের কণ্ঠের প্রতিবিম্ব, যেখানে প্রকৃতির মৌনতা আসলে আমাদের আত্মিক চিৎকার।

আজকের দিনে আমরা শুধু অনুশীলন করবো না, বরং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো- প্রতিটি বৃক্ষরোপণে আমাদের অঙ্গীকার হবে প্রকৃতির প্রতি স্নেহ ও শ্রদ্ধার। যেখানে গাছের প্রতিটি ডাল, পাতাও হয়ে উঠবে জীবন ও আশা জাগানো এক সুর।

পরিবেশ দিবস, এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিক দিন নয়, বরং প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে হারিয়ে যাওয়া বন্ধনের পুনরুদ্ধার। এখানে নেই বাহুল্য, নেই উন্মাদনা; আছে এক শান্ত, দৃঢ় অঙ্গীকার- আমরা গাছ লাগাবো, এবং হৃদয়ে ধারণ করবো প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বোধ।

একটি গাছের চারা রোপণ যেন একটি জীবনের বীজ বপন। প্রতিটি পাতায় ফুটে উঠুক ভবিষ্যতের আশাবাদ।
আলুন, আমরা ফিরে যাই প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছায়ায়- যেখানে সহাবস্থান মানে শুধু টিকে থাকা নয়, বরং একে অপরকে রক্ষা করার দায়।

আসুন, গড়ে তুলি এক সচেতন, সংবেদনশীল সমাজ- যেখানে প্রকৃতির নিঃশ্বাসে বেঁচে থাকবে মানবতার ভবিষ্যৎ।