
ছবি: জনকন্ঠ
বর্ষার ভেজা হাওয়ায় যখন ইলিশের গন্ধ ছড়ানোর কথা, তখন পাড়া-মহল্লায় শুধু শোনা যায় দীর্ঘশ্বাস। জাতীয় মাছ ইলিশ এখন আর নদীর নয়, হয়েছে বিত্তবানদের ডাইনিং টেবিলের একচেটিয়া খাবার। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম—যেখানেই যান, গরিবের ঘরে ইলিশের গল্প এখন শুধুই স্মৃতির মতো।
সিরাজদিখান বাজারে আসা ক্রেতা ছমির উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন,"বাজারে আসলে কমদামের মাছই বড়জোর কিনি।এক সময়ের গরিবের ইলিশ এখন নাকি বড়লোকদের খাওয়ার মাছ।
এক কেজি ইলিশের দাম এখন আড়াই হাজার টাকা—যা একজন দিনমজুরের সাত দিনের আয়। কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে ছোট মাছ বা ডিম কিনছেন, কেউবা শুধু চাল-ডালেই দিন পার করছেন।
পোশাকশ্রমিক রোকসানা বলেন, “বাচ্চারা ইলিশ চায়, টিভিতে দেখে খেতে চায়। কীভাবে দিই? বাজারে ঢুকে শুধু তাকিয়ে বের হয়ে আসি।”
জাতীয় মাছ হয়েও কেন জাতীয় নাগরিকদের নাগালে নেই এই ইলিশ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সরবরাহ সংকট নয়, ইলিশ বাজারে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, অকার্যকর বাজার মনিটরিং, আর টেকসই মাছ ধরার অভাব। ফলে গরিবের পাতে ইলিশ ফেরানোর বাস্তব উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
মৎস্য গবেষকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হবে না। দরকার হচ্ছে—স্থানীয় জেলেদের প্রশিক্ষণ, বাজারে সরাসরি কৃষক-মৎস্যজীবীর অংশগ্রহণ, আর ভর্তুকি দিয়ে হলেও কিছু ইলিশ গরিব জনগণের জন্য সংরক্ষণ।”
এক সময়ের সাধারণ মাছ, এখন রাজা-উজিরের খাবার। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশ আসে এই দেশ থেকেই। সে মাছ যদি দেশের গরিব মানুষই না খেতে পারে, তাহলে সেটি কি সত্যিই “জাতীয়” মাছ?
গরিবের পাতে ইলিশ ফেরাতে চাইলে দরকার বাজারে ন্যায্যতা, আর রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা। না হলে ইলিশ কেবল গানেই থাকবে—“পদ্মার ইলিশ মাছে ভাজি, সে যে আমার খাইতে রাজি…”
Mily