ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

স্বপ্ন দেখি, তবু কেন মনে থাকে না? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় চমকপ্রদ তথ্য

প্রকাশিত: ১৪:৫১, ২৪ জুন ২০২৫

স্বপ্ন দেখি, তবু কেন মনে থাকে না? বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় চমকপ্রদ তথ্য

ছবি: প্রতীকী

আপনি প্রতিদিন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটান ঘুমিয়ে। এর একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে স্বপ্ন। অথচ ঘুম থেকে উঠে সেই স্বপ্নের স্মৃতি বেশিরভাগ সময়েই মস্তিষ্কে থাকে না। আর থাকলেও, কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা হাওয়ায় মিলিয়ে যায়—যেন স্বপ্নও বুঝি স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেল।

সচেতন জীবনে এমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুলে যাওয়ার ঘটনা হলে নিশ্চয়ই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন। কিন্তু স্বপ্নের ক্ষেত্রে এটা একেবারেই স্বাভাবিক। কেন এমন হয়?

আমরা স্বপ্ন ভুলে যাই, কারণ…

অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট থমাস আন্দ্রিয়লনের মতে, “আমরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্ন ভুলে যাই। অনেকেই ভাবেন তারা স্বপ্নই দেখেন না, কিন্তু আসলে তারা স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন না।” গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের নির্দিষ্ট মুহূর্তে কাউকে জাগিয়ে দিলে এমন ব্যক্তিরাও স্বপ্নের কথা মনে করতে পারেন, যারা বছরের পর বছর মনে করতে পারেননি।

ঘুমের মধ্যে ‘হিপোক্যাম্পাস’-এর ঘুম ভাঙতে দেরি হয়?

২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কের সব অংশ একসঙ্গে নিস্ক্রিয় হয় না। আমাদের স্মৃতি সংরক্ষণের মূল কেন্দ্র হিপোক্যাম্পাস সবচেয়ে দেরিতে ঘুমায় এবং দেরিতে জাগে।

ফলে ঘুম ভাঙার পর এক ধরনের ‘স্মৃতি শূন্যতা’ তৈরি হয়। আপনি হয়তো স্বপ্নটা কিছুটা মনে করতে পারছেন, কিন্তু হিপোক্যাম্পাস তখনও পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ায় সেই স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে না।

স্মৃতির রাসায়নিক কারণও রয়েছে

ঘুমালে আমাদের মস্তিষ্কে অ্যাসিটাইলকোলিন ও নোরঅ্যাড্রেনালিন নামের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা কমে যায়। এই দুই রাসায়নিক উপাদান স্মৃতি তৈরি ও সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখে।

তবে ঘুমের ‘র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট’ (REM) পর্বে, যেখানে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখা হয়, তখন অ্যাসিটাইলকোলিন আবার বেড়ে যায়—কিন্তু নোরঅ্যাড্রেনালিন থাকে নিচে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অদ্ভুত রাসায়নিক ভারসাম্য আমাদের স্বপ্ন মনে রাখতে বাধা দেয়।

স্বপ্ন মনে রাখতে বেশি ঘন ঘন ঘুম ভাঙে যাদের

২০১৭ সালে ফ্রান্সে ৩৬ জনকে নিয়ে এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা প্রায়ই স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন, তাদের ঘুম ভাঙে বেশি এবং গড়ে দুই মিনিট স্থায়ী হয়। যারা খুব কমই স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন, তাদের ঘুম ভাঙার সময় গড়ে এক মিনিটেরও কম।

অর্থাৎ, ঘন ঘন মাঝরাতে জেগে ওঠা এবং কিছু সময় জেগে থাকা স্বপ্ন মনে রাখার সম্ভাবনা বাড়ায়।

সব স্বপ্ন কি মনে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব স্বপ্নই গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেমন আপনি দাঁত ব্রাশ করার সময় কী ভাবছিলেন সেটা মনে নেই, তেমনই অনেক স্বপ্নও আমাদের মস্তিষ্ক ‘অপ্রয়োজনীয়’ ভেবে বাদ দিয়ে দেয়। কিন্তু যদি স্বপ্নটি উৎকট, আবেগপ্রবণ কিংবা সংহত গল্পভিত্তিক হয়, তাহলে তা বেশি মনে থাকে।

স্বপ্ন মনে রাখতে চাইলে কী করবেন?

হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক রবার্ট স্টিকগোল্ডের মতে, ঘুমানোর আগে বেশি পানি পান করুন—যাতে রাতে একাধিকবার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ বন্ধ রেখে, নড়াচড়া না করে, সেই স্বপ্নটা মনে মনে রিভাইস করুন যতক্ষণ না আপনার স্মৃতির কেন্দ্র ‘হিপোক্যাম্পাস’ পুরো জেগে ওঠে।

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×