ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

এই ৫টি লক্ষণ দেখলে এড়িয়ে যাবেন না, নাহলে ক্যানসারে জীবন হারাবেন!

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২৪ জুন ২০২৫

এই ৫টি লক্ষণ দেখলে এড়িয়ে যাবেন না, নাহলে ক্যানসারে জীবন হারাবেন!

ছবি: সংগৃহীত

বাওয়েল ক্যানসার, যেটিকে কোলোরেক্টাল ক্যানসার নামেও ডাকা হয়, এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে অন্যতম সাধারণ এক ধরনের ক্যানসার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেকেই জানতেই পারেন না যে তারা এই ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছেন, যতক্ষণ না ক্যানসার অনেক দূর এগিয়ে যায়। এর কারণ হলো—বাওয়েল ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো অনেক সময় খুব হালকা, অস্পষ্ট অথবা এমন কিছু রোগের সঙ্গে মিল থাকে যেগুলো আমরা গুরুত্ব দেই না—যেমন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা সাধারণ পেটের ইনফেকশন।

কিন্তু যদি আপনি শরীরের এই সূক্ষ্ম বার্তাগুলো শুরুতেই বুঝতে পারেন, তবে বাওয়েল ক্যানসার চিকিৎসাযোগ্য। তাই শরীরের ছোটখাটো অস্বাভাবিকতাকেও অবহেলা করা ঠিক নয়। নিচে এমন ৫টি প্রাথমিক উপসর্গ তুলে ধরা হলো যেগুলো সহজে চোখে পড়ে না, কিন্তু বাওয়েল ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে:

১. মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন

বাওয়েল ক্যানসারের একটি প্রথম দিকের লক্ষণ হলো মলত্যাগের স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তন হওয়া। যেমন: স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় টয়লেটে যেতে হওয়া, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য, অথবা পাতলা মল হওয়া। কেউ কেউ এমন অনুভব করেন যেন মলত্যাগের পরও ঠিকমতো পেট পরিষ্কার হয়নি। মাঝে মাঝে এমন পরিবর্তন হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু যদি এটা তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ ক্যানসার অন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে এমন পরিবর্তন দেখা যায়।

২. মলের সঙ্গে রক্ত থাকা বা রেকটাল রক্তপাত

মলের সঙ্গে রক্ত দেখা একটি ভয়ানক লক্ষণ হতে পারে। যদিও অনেক সময় এটি পাইলসের মতো সাধারণ কারণেও হতে পারে, তবে এটি বাওয়েল ক্যানসারের একটি প্রথম দিকের ইঙ্গিতও হতে পারে। রক্ত উজ্জ্বল লাল বা মলের সঙ্গে মিশে গাঢ় বর্ণেরও হতে পারে। যদি আপনি বারবার এমন রক্ত দেখতে পান, এবং এর সঙ্গে ক্লান্তি বা ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ থাকে, তবে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। যত অল্পই হোক না কেন, রেকটাল রক্তপাতকে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।

৩. কারণ ছাড়া ওজন হ্রাস

ডায়েট বা ব্যায়ামের পরিবর্তন ছাড়াই যদি হঠাৎ করে আপনার ওজন কমে যেতে থাকে, তবে তা স্বাস্থ্যগত বিপদের লক্ষণ হতে পারে—যার মধ্যে বাওয়েল ক্যানসারও রয়েছে। ক্যানসার কোষ শরীরের শক্তি ব্যবহারের পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটায়, ফলে হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে। বাওয়েল ক্যানসারের ক্ষেত্রে টিউমারগুলো শরীরের পুষ্টি শোষণে বাধা দেয় অথবা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যেগুলোর ফলে অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস ঘটে।

৪. পেটে নিয়মিত ব্যথা বা অস্বস্তি

যদি আপনি মাঝেমধ্যে ক্র্যাম্প, ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি অনুভব করেন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়—তবে এটি হতে পারে অন্ত্রে টিউমারের উপস্থিতির কারণে। এসব টিউমার অন্ত্রের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে বা অন্ত্রকে উত্তেজিত করতে পারে, যার ফলে এই ধরনের ব্যথা, পূর্ণতা বা অস্বস্তি দেখা যায়। অনেকেই একে সাধারণ গ্যাস বা বদহজম ভেবে এড়িয়ে যান। তবে যদি এটি স্থায়ী হয়, বিশেষ করে মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন বা ওজন কমে যাওয়ার সঙ্গে একসঙ্গে ঘটে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৫. সবসময় ক্লান্তিভাব বা দুর্বলতা অনুভব করা

আপনি কি পর্যাপ্ত ঘুমালেও সারাদিন ক্লান্ত অনুভব করেন? এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বাওয়েল ক্যানসারের একটি সূক্ষ্ম ও প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে, যা অনেক সময় নজর এড়িয়ে যায়। এই রোগ ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ঘটাতে পারে, যার ফলে অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) তৈরি হয় এবং আপনি দুর্বল ও অবসন্ন বোধ করতে থাকেন। যদি দীর্ঘদিন ধরে শক্তি ও উদ্যমহীন অনুভব করেন এবং এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে না পান, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

বাওয়েল ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করা গেলে এটি অত্যন্ত কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। তাই শরীরের বার্তা ও লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে উপরোক্ত উপসর্গগুলোর যেকোনোটি যদি তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আবির

×