
ভিটামিন ডি, যাকে অনেকে ‘সূর্যালোক ভিটামিন’ বলেও চেনেন, আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। হাড়ের গঠন মজবুত রাখা থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো পর্যন্ত— নানা ধরনের শারীরিক প্রক্রিয়ায় এটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভিটামিন ডি ঘাটতির শিকার। কিছু কিছু জনসংখ্যার মধ্যে এই ঘাটতির হার প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।
এই ঘাটতির প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিলেও বিশেষ করে ত্বক ও পায়ের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণে তা প্রকটভাবে ধরা পড়ে। অনেকে যেটিকে সাধারণ ত্বকের চুলকানি মনে করেন, তা-ও হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটির প্রাথমিক সংকেত। সময়মতো এসব লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। নিচে ত্বক ও পায়ে ভিটামিন ডি ঘাটির পাঁচটি স্পষ্ট লক্ষণ তুলে ধরা হলো।
১. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
আপনার শরীরে যদি ছোটখাটো কাটা বা ছেঁড়ার ক্ষত সহজে শুকাতে না চায়, তবে তা হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটির ইঙ্গিত। এই ভিটামিন ত্বকের কোষ পুনর্জন্ম এবং ক্ষতস্থানে নতুন টিস্যু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যৌগ উৎপাদনে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত উপস্থিতি ক্ষত দ্রুত সারাতে সহায়তা করে। ফলে যদি কোনো ক্ষত দীর্ঘদিন শুকাতে না চায় বা সহজেই ইনফেকশন হয়ে যায়, তবে তা অবশ্যই সতর্কতার বিষয়।
২. ত্বকে চুলকানি ও শুষ্কভাব
যদি আপনার ত্বকে দীর্ঘদিন ধরে চুলকানি বা শুষ্ক ভাব লেগেই থাকে, তবে তা শুধুই প্রসাধনী বা লোশনের প্রতিক্রিয়া নয়। এটি ভিটামিন ডি ঘাটির অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। ভিটামিন ডি ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। ঘাটতি হলে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, পাতলা, স্ক্যালি এবং কখনও কখনও একজিমার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩. ত্বকে উজ্জ্বলতা হারানো বা ফ্যাকাশে ভাব
ত্বকের প্রাণহীনতা বা অস্বাভাবিক ফ্যাকাশে রঙও হতে পারে ভিটামিন ডি-এর ঘাটির চিহ্ন। এই ভিটামিন মেলানিন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, যা ত্বকের রঙ ও উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন রোদে না বের হন বা যাদের গাঢ় ত্বক, তাদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণটি আরও বেশি স্পষ্ট হয়।
৪. পায়ে ব্যথা ও দুর্বলতা
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে? চেয়ার থেকে উঠতে হাঁটু কাঁপছে? এগুলো হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটির ফলে পেশি ও হাড়ের দুর্বলতার লক্ষণ। ঘাটতি হলে পায়ের হাড়ে ব্যথা, পেশির শক্তি কমে যাওয়া এমনকি হাড় বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিন (পায়ের সামনের অংশ) চাপ দিলে ব্যথা অনুভূত হলে তা অবহেলা করা যাবে না।
৫. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
হঠাৎ অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া, বিশেষ করে ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা মাথা ও মুখে বেশি ঘাম হওয়া, হতে পারে ভিটামিন ডি ঘাটির প্রাথমিক সংকেত। অনেকে এটিকে ক্লান্তি ভেবে ভুল করেন। কিন্তু ভিটামিন ডি আমাদের ঘর্মগ্রন্থির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর ঘাটতি হলে ঘামঝরার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয় এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি ঘাম হতে শুরু করে।
রোদে কিছুক্ষণ সময় কাটানো ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, টুনা, ম্যাকারেল), ডিমের কুসুম ও মাশরুম নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা এই ঘাটতি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। তবে উপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি যদি নিয়মিত অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। নিজের শরীরের ভাষা বুঝে আগে থেকেই সজাগ থাকা সবচেয়ে বড় সচেতনতা।
সূত্র:https://tinyurl.com/deyvxrnx
আফরোজা