ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ছোট একটি বড়ি, ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় সম্ভাবনা!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ২৫ জুন ২০২৫

ছোট একটি বড়ি, ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় সম্ভাবনা!

ছবি: সংগৃহীত

একটি ছোট ট্যাবলেট, আর তাতেই ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে মিলতে পারে বড় ধরনের সুরক্ষা। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—মাত্র ৭৫ মি.গ্রা. ‘বেবি অ্যাসপিরিন’ দৈনিক গ্রহণ করলেই কিছু জিনগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকে নেমে আসে।

গবেষণার মূল লক্ষ্য: সঠিক ডোজ নির্ধারণ

যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার জন বার্ন–এর নেতৃত্বে পরিচালিত CaPP3 নামের ক্যান্সার প্রতিরোধ প্রকল্পে দেখা গেছে, বিভিন্ন মাত্রার অ্যাসপিরিন গ্রহণকারীদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ডোজটিও বড় ডোজের মতোই কার্যকর।

গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ১,৮৭৯ জন Lynch syndrome আক্রান্ত রোগী—এটি একটি জিনগত রোগ, যা অন্ত্র ও জরায়ুর মতো বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

গবেষকের ভাষ্যে

অধ্যাপক বার্ন বলেন, “এই গবেষণা আমাদের স্পষ্ট করে বলছে—বড় ডোজ না দিয়েও আমরা রোগীদের রক্ষা করতে পারি, আর একইসঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও কমিয়ে আনতে পারি।”

তিনি আরও বলেন, “এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি বছর প্রায় ২% হারে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু তারা যদি প্রতিদিন একটি করে অ্যাসপিরিন বড়ি খান, সেই ঝুঁকি ১%-এ নেমে আসে।”

অংশগ্রহণকারী নিক জেমসের জীবনগাঁথা

নিউক্যাসলের ফার্নিচার নির্মাতা নিক জেমস ছিলেন এই ট্রায়ালের প্রথম অংশগ্রহণকারী।
তিনি বলেন, “আমার পরিবারে অনেকেই ক্যান্সারে মারা গেছেন—মা, দাদা, খালা। তখনই বুঝি কিছু একটা সমস্যা আছে। পরে জানা গেল, আমাদের পরিবারে Lynch syndrome রয়েছে।”

প্রায় এক দশক আগে গবেষণায় অংশ নেওয়া নিক দীর্ঘদিন ধরে ৩০০ মি.গ্রা. ডোজ গ্রহণ করছিলেন। তবে এখন গবেষণায় প্রমাণিত—৭৫ মি.গ্রা. ডোজেই মিলছে সমান সুফল।

নিক বলেন,“বেবি অ্যাসপিরিনে নামার বিষয়টি আমাকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি, অথচ মনে হচ্ছে আমি নিজেকে ক্যান্সার থেকে বাঁচিয়ে চলেছি।"

Lynch syndrome কী?

এটি একটি বংশগত রোগ যেখানে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধকারী বিশেষ একধরনের জিনের ত্রুটি থাকে। ফলে অন্ত্র, জরায়ুসহ একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

যুক্তরাজ্যে প্রায় ১.৫ লাখ মানুষ Lynch syndrome বহন করলেও, এর মধ্যে মাত্র ৫-১০% শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে NHS England। বেশিরভাগ মানুষ তখনই পরীক্ষা করান, যখন পরিবারের একাধিক সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তখনই আসে আতঙ্ক, আর ধরা পড়ে এই জিনগত ত্রুটি।

 

এখনই পদক্ষেপ জরুরি

NHS ইতোমধ্যেই বলেছে, Lynch syndrome রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করে তাদের ক্যান্সার স্ক্রিনিং, পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দেওয়াই এখন অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

অধ্যাপক বার্ন বলেন, “আমরা যদি তাদের সময়মতো শনাক্ত করতে পারি, তাহলে শুধু একটি বেবি অ্যাসপিরিন দিয়েই অনেক জীবন রক্ষা করা সম্ভব।”


যদি আপনার পরিবারে একাধিক সদস্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন—বিশেষ করে চল্লিশের কোঠায়—তাহলে সতর্ক হোন। Lynch syndrome পরীক্ষা করিয়ে নিন। আর চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিদিন একটি ছোট অ্যাসপিরিন বড়ি শুরু করাও হতে পারে ক্যান্সার প্রতিরোধের বড় অস্ত্র।

"প্রতিরোধ চিকিৎসার চেয়ে অনেক সহজ ও নিরাপদ। আর যদি সেটা হয় মাত্র একটি ছোট বড়ির মাধ্যমে—তাহলে এই উদ্যোগ হতে পারে স্বাস্থ্যসেবার ইতিহাসে নতুন বিপ্লব।"

কোনো ধরণের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

 

তথ্যসূত্র: BBC

Mily

×