ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

রিবিল্ড বাংলাদেশ: বহুমুখী অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগে একটি সাহসী জাতীয় রূপরেখা

আলহাজ্ব কবীর আহমদ ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:৪০, ২৫ জুন ২০২৫

রিবিল্ড বাংলাদেশ: বহুমুখী অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বিনিয়োগে একটি সাহসী জাতীয় রূপরেখা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও, কাঠামোগত বৈচিত্র্যহীনতা, উৎপাদন খাতে সীমিত বৈচিত্র্য এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগে প্রতিযোগিতাহীনতা আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া গ্রুপ ইউকে লিমিটেড প্রস্তাব করেছে ‘রিবিল্ড বাংলাদেশ’—একটি বাস্তবভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুমাত্রিক জাতীয় রূপরেখা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে রপ্তানি নির্ভরতা থেকে সুশৃঙ্খল বহুমুখী উৎপাদন অর্থনীতিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

পোশাকনির্ভরতা থেকে উৎপাদন বৈচিত্র্যের দিকে

বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। একক খাতনির্ভর এই অর্থনৈতিক কাঠামো বাংলাদেশকে বৈশ্বিক ঝুঁকির মুখোমুখি করছে। রিবিল্ড বাংলাদেশ তাই প্রস্তাব করছে—

  • ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন।
  • কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বায়োটেকনোলজি।
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানি।
  • সবুজ শিল্প, হালকা প্রকৌশল ও ওষুধশিল্পে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI)।

মানবসম্পদে বিনিয়োগ: জনসংখ্যা নয়, উৎপাদনশক্তি

বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৭ কোটিরও বেশি। কিন্তু দক্ষতা ঘাটতি ও প্রযুক্তি জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এই সম্পদকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে বাধা দিচ্ছে। প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে রয়েছে—

  • কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার আধুনিকীকরণ।
  • ডিজিটাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট একাডেমি।
  • নারী ও গ্রামীণ তরুণদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপ ও প্রশিক্ষণ।
  • প্রবাসী দক্ষ শ্রমিকদের রি-ইনটিগ্রেশন প্রোগ্রাম।

অবকাঠামো উন্নয়ন: প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু

বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল—অর্জন অনেক হলেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অবকাঠামোকে আরও উন্নত, সংযুক্ত ও টেকসই করতে হবে।

প্রস্তাবিত উন্নয়ন খাতগুলো হলো—

  • পোর্ট-বেইসড ইকোনমিক হাব।
  • হাই-স্পিড লজিস্টিকস করিডোর।
  • ৫জি ভিত্তিক স্মার্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন।
  • নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্রিন বিল্ডিং মানদণ্ড।

জলবায়ু ও টেকসই অর্থনীতি: ঝুঁকি থেকে সম্ভাবনার পথে

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। অথচ নবায়নযোগ্য খাতে সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা গেলে এই চ্যালেঞ্জকে সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব।

রিবিল্ড বাংলাদেশ প্রস্তাব করছে—

  • সৌর, বায়ু ও বায়োগ্যাসভিত্তিক যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প।
  • ক্লাইমেট-স্মার্ট কৃষি ও জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো।
  • আন্তর্জাতিক ‘গ্রিন বন্ড’ ও SDG সংযুক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে ফান্ডিং।

স্টার্টআপ ও SME খাত: উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়ার ভিত

বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সম্প্রসারণে প্রয়োজন—

  • জাতীয় স্টার্টআপ পুঁজি তহবিল।
  • ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর নেটওয়ার্ক।
  • SME ডিজিটালাইজেশন কর্মসূচি।
  • নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কর-ছাড় ও প্রণোদনা।

এই খাতের বিকাশেই ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি-নির্ভর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে।

ROI ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা: বাস্তবভিত্তিক চিত্র

বিনিয়োগ খাত                  প্রত্যাশিত ROI          ফেরত সময়সীমা

তথ্যপ্রযুক্তি ও BPO              ২০–২৫%                 ৩–৫ বছর

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ            ১৫–১৮%                 ২–৪ বছর

নবায়নযোগ্য জ্বালানি              ১২–১৪%                 ৫–৭ বছর

হালকা প্রকৌশল ও ওষুধ         ১৮–২২%                 ৩–৫ বছর

বাংলাদেশে ১০০টিরও বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, দক্ষ শ্রমশক্তি, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকারের কর-ছাড় নীতি ও এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনগুলো এই রিটার্ন বাস্তবায়নে সহায়ক।

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি: টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি

রিবিল্ড বাংলাদেশ কেবল অবকাঠামো বা উৎপাদন নয়—সামাজিক ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও দক্ষ নেতৃত্বকে উন্নয়নের কেন্দ্রে স্থাপন করার প্রস্তাব করেছে।

মূল প্রস্তাবসমূহ:

  • স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ডিজিটাল সংযোগে সবার অধিকার।
  • প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ।
  • নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে বৈপ্লবিক উদ্যোগ।
  • অঞ্চলভিত্তিক ভারসাম্যপূর্ণ শিল্প উন্নয়ন।

উপসংহার: এখনই সময় বিনিয়োগ ও নেতৃত্বের

রিবিল্ড বাংলাদেশ কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি একটি কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার পরবর্তী ‘ইনভেস্টমেন্ট ও ইনোভেশন হাব’।

বিশ্ব যখন নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের সন্ধানে, তখন বাংলাদেশের উচিত স্মার্ট নেতৃত্ব, নীতিগত স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগানো।

আজকের সাহসী পদক্ষেপই আগামী দিনের উন্নত, কর্মসংস্থানসমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারে।

 

লেখক পরিচিতি:

আলহাজ্ব কবীর আহমদ ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন চিন্তানির্ভর রাজনীতির একজন অগ্রপথিক, প্রবাসী ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের নতুন পথে এগিয়ে নিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

রাকিব

×