
মধ্যপ্রাচ্য সংকট প্রতিনিয়ত গভীরতর হচ্ছে। ইসরাইল শুরু করেছিল ফিলিস্তিন আক্রমণ করে লাখ লাখ নিরস্ত্র মানুষের ওপর বোমাবর্ষণ করে, তাদের ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল ধ্বংস করে। তারপর একে একে সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন- সবখানেই তারা আক্রমণ করেছে। এখন তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরানের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রও তাতে যোগ দিয়েছে, যেন এটি কোনো আঞ্চলিক সংঘর্ষ নয়- বরং একটি বৈশ্বিক ধর্মযুদ্ধের সূচনা। আমরা গভীরভাবে বিচলিত। আজকের লেখায় এই প্রেক্ষাপটকেই তুলে ধরেছি এবং সেই সঙ্গে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ পরিণতি ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে আমার ধারণা বিষয়ে আলোকপাত করেছি যাতে পাঠকরা পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পান। আমেরিকা ২২ জুন ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা কেন্দ্রে হামলা করেছে। ট্রাম্প বলেছেন যে, তারা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইরানের প্রধান সব পরমাণু বোমা তৈরির পরীক্ষাগার। ফোরদো, নাতানয এবং এসফাহান পারমাণবিক স্থাপনা কেন্দ্র আক্রমণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আমার ধারণা ইরান পরমাণু বোমা বানানোর ধারেকাছেও যেতে পারেনি। যেহেতু ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক এজেন্সি বলেছে ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর কোনো লক্ষণ তারা দেখতে পায়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডও বলেছে ইরানের সেই সক্ষমতা নেই। তাই কেন ইসরাইল ইরানে হামলা করল তার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
আমার ধারণা আমেরিকা ইরানের এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা কেন্দ্রে আক্রমণ করেছে কয়েকটি কারণে। প্রথমত, যেহেতু তারা মিথ্যা অভিযোগে ইরান হামলা করেছে, তাই এখন এই মিথ্যাকে ঢাকার জন্য হামলা চালিয়ে বলবে যে, ইরানের পরমাণু বোমা বানানোর সক্ষমতা তারা ধ্বংস করেছে; আক্রমণ না করলে ইরান এই বোমা বানিয়ে ফেলত। এই প্রসঙ্গে ইরাকের কেমিক্যাল উইপেন আছে এই অজুহাতে আক্রমণের ঘটনা ভুলে গেলে চলবে না। দ্বিতীয়ত, সারা পৃথিবীতে এখন দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারের একটা ধারাবাহিকতা চলছে। বিশেষত কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই মুসলমান প্রধান রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার এমন নির্মম অন্যায় সুযোগ কবে শেষ এসেছিল মনে করতে পারছি না। ইসরাইল একযোগে পাঁচটি মুসলমান দেশ আক্রমণ করেছে। কোথাও কোনো প্রতিবাদ নেই। রাশিয়া ব্যস্ত ইউক্রেন নিয়ে। চায়না আমেরিকার ট্যারিফ, সঙ্গে তাইওয়ান আর হংকং এর অস্থিতিশীলতা সামলাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়াকে যুদ্ধে সাহায্য করছে। এমতাবস্থায় মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ এখন তাদের নেই। তৃতীয়ত, সারা বিশ্বে গত কয়েক বছর ধরে ডিপ স্টেটের জয়জয়কার। মোটামুটি ভারত, তুরস্ক এবং ইরান ছাড়া অন্তত ১৫টি দেশে ডিপ স্টেট তাদের পছন্দের সরকার বসাতে পেরেছে, যার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। তুরস্কে ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্র এবং ক্যু চলছে। এখন পর্যন্ত ডিপ স্টেট সফল হতে না পারলেও, এরদোগান দিন দিন দুর্বল হচ্ছেন। ভারতে কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীকে ঘিরে ডিপ স্টেট মোদিকে সরানোর জন্য সবচেয়ে বেশি অর্থ ও বুদ্ধি ব্যয় করছে। কিন্তু মোদির টিকে থাকার রহস্য হচ্ছে তার দেশের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা। দেশের মানুষের সমর্থন থাকলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয় না। ইরানের মৌলবাদী সরকারের দেশের ভেতরের সমর্থন এখন ২০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। তাই ষড়যন্ত্র জোরদার। ডিপ স্টেট তাদের ধারাবাহিক সফলতার এই জোয়ারে খোমেনীকে ফেলে দিতে চায়, যেটা খুবই সম্ভব। মোসাদ নিজেই বলেছে পৃথিবীতে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হচ্ছে ইরানের ভেতর। চতুর্থত, ইরান মুসলমান দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তিতে অন্যতম এবং আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। যদিও পাকিস্তানের পরমাণু বোমা আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এত দূর থেকে কখনো আমেরিকা বা ইসরাইলের জন্য হুমকি হবে এমনটা মনে হয় না। তাছাড়া আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে পাকিস্তান। তাদের সব গোপন সামরিক তথ্য আমেরিকার হাতের মুঠোয়। সুতরাং ইসরাইল যখন মধ্যপ্রাচ্য দখল করে নিচ্ছে তাদের ধর্মীয় স্বপ্ন এৎবধঃবৎ ওংৎধবষ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, ঠিক সেই সময়ে আমেরিকা তাদের স্থায়ী শত্রু ইরানকে ধ্বংস করার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না।
আসলে পুরো বিষয়টি এতটাই অযৌক্তিক যে, এটা নিয়ে কী আলোচনা করা যায় ভেবে পাই না। ইসরাইলের ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ইরান- সব হামলাই অন্যায় ও অযৌক্তিক। আমেরিকার ইরান হামলা অন্যায় ও অযৌক্তিক। আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করছি যেখানে ইসরাইল ৯২টি পরমাণু বোমার অধিকারী অথচ সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। ইসরাইল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক এজেন্সিকে তাদের দেশে ঢুকতে দেবে না। সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। অন্যদিকে ইরান পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালাতে পারবে না এবং কেন পারবে না- এমনকি সেই প্রশ্নও করা যাবে না। সবকিছুই জোট। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, দুবাইয়ের মতো দেশগুলো বাংলাদেশি, পাকিস্তানিদের মিসকিন বলে। কিন্তু আমেরিকার পদলেহন করে। মুসলিম উম্মাহর বন্ধন এইক্ষেত্রে কোনো কাজ করে না। আপনি ওমরাহ করতে হাজার কোটি টাকা খরচ করেন; সৌদি আরব সেই টাকা ট্রাম্পের পদতলে ঢেলে দিয়ে আসে। আপনি মুসলিম উম্মাহ বলে চিৎকার করে আবাবিল পাখি খোঁজেন আকাশে; আর সৌদি আরব-কাতার-কুয়েত আপনাকে নির্বোধ বলে হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমেরিকান যুদ্ধ বিমান কিনে ইয়েমেন, ফিলিস্তিন আর ইরান হামলায় সাহায্য করে। সবই জোট। ধর্মের কিছু নেই এখানে। যতদিন বুঝবেন না, ততদিন উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিতেই থাকবে। আপনি আপনার সন্তানকে বড় হওয়ার সময় শেখাবেন, ‘সদা সত্য কথা বলিবে, সৎ পথে চলিবে, অন্যায়কে অন্যায় বলিবে।’ অথচ তারা বড় হওয়ার সময় দেখবে পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী, ক্ষমতাধর, বিদ্যাবুদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়া রাষ্ট্র, সরকার, মানুষেরা মিথ্যা বলে, অসৎ পথে চলে, অন্যায় করে। এই প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে, তারা সবাইকে অবিশ্বাস করবে, তারা অমানুষ হবে- এটাই বাস্তবতা, এটাই রূঢ় সত্য। আপনি কষ্ট করে সন্তানকে পড়ালেখা করিয়ে নিজের দেশ কত খারাপ সেটি বলে, বুঝিয়ে, দেখিয়ে, তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাবেন যুক্তরাষ্ট্রে- যারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অন্যায়, অত্যাচার ও সন্ত্রাস কায়েম করে রেখেছে। পৃথিবীকে আমরা এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছি যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের আর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। গাজায় ২০ হাজার শিশু মেরে ফেললে সেটা অন্যায় না, ইরানে বিনা কারণে হামলা করলে সেটা অন্যায় না। অন্যায় কেবল কিছু রাষ্ট্রের, কিছু সরকারের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভরশীল।
এই যুদ্ধের একটি ভয়াবহ ভবিষ্যৎ এবং অর্থনৈতিক ফলও রয়েছে, যেটি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়- সারা বিশ্বকে আলোড়িত করবে। তেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যুদ্ধ চলমান থাকলে হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন ব্যাহত হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, খাদ্য পরিবহন, আমদানি-রপ্তানির খরচ বেড়ে যাবে। দরিদ্র দেশগুলো নিঃশেষ হয়ে পড়বে। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি নতুন রেকর্ড ছোঁবে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝুঁকবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রা দুর্বল হবে, বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়বে। রেমিট্যান্স কমবে, কর্মসংস্থান কমবে, শিল্প বন্ধ হবে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার অনিশ্চিত হয়ে উঠবে- বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভবিষ্যৎ ভয়ানক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।অস্ত্র শিল্পের দানবীয় লাভ বাড়বে, কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আরও গরিব হয়ে পড়বে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় না বানিয়ে তারা কিনবে একটি ঋ-৩৫। এই যুদ্ধ একটি পুরো জাতি নয়- একটি সভ্যতা ধ্বংস করবে। ইরান একা। শিয়া-সুন্নি বিভেদে বিভক্ত মুসলমানরা তাদের পাশেও নেই। ইতিহাসে এই জাতির কি কোনো শিক্ষা হবে? ইরান শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা মাথা উঁচু করে লড়ছে- এটুকু সাহস তাদের আছে। আমরা যারা দূর থেকে দেখি, তাদের প্রতি সহানুভূতি নয়- বরং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা দরকার। কারণ এই যুদ্ধের পালা একদিন আমাদের দিকেও ঘুরে আসবে। তখন আমরা কি কেবল বিচার চাই বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেব? নাকি এখন থেকেই প্রস্তুতি নেব জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-শিল্প, মুক্তচিন্তা আর অর্থনৈতিক সক্ষমতার মাধ্যমে টিকে থাকার? প্রশ্নটা কঠিন, কিন্তু এর উত্তর না খুঁজলে আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ভাগা প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত হব। ইরান একা কিছুই করতে পারবে না। আজ তাদের বেশ কিছু মিসাইল ইসরাইলে আঘাত করেছে; তাতে ক্ষতি-বৃদ্ধি কিছু হবে না। ইরানের পর আপনার পালা। মানুন না মানুন এটিই হবে। আপনি বসে বসে আল্লাহু আকবর বলে আর ফেসবুকে মিথ্যা রিল শেয়ার দিয়ে আমেরিকা-ইসরাইলকে ঠেকাতে পারবেন না। বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্য-মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছাড়া আপনি অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারবেন না; আপনার দাবি যত যৌক্তিকই হোক না কেন। আপনি এতই নির্বোধ যে আল্লাহর যে নির্দেশ- অর্থাৎ পড়ালেখা করা, জ্ঞানচর্চা করা, নবী (সা.) এর হুকুমে বিদ্যা অর্জনে ব্যস্ত হওয়া- সেটাও আপনি বোঝেন না। আপনার ভাগ্যে তাই মিথ্যাচার আর গুজব ছড়িয়ে ঘুমের মধ্যে বিজয় আর বাস্তবের পরাজয় আছে।
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেট অস্থির হয়ে উঠছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণ, ডলার কিংবা সুইস ফ্র্যাঙ্কের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মুদ্রা দুর্বল হবে, ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বীমা খরচ, পণ্য পরিবহন সময় ও মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে- যা সরাসরি ভোগ্যপণ্যের দামে প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাপী এই সংকটের আরেকটি প্রভাব পড়বে অভিবাসনে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক কর্মরত। যুদ্ধ যত বিস্তৃত হবে, তত বেশি উদ্বেগ তৈরি হবে চাকরি, নিরাপত্তা ও বৈদেশিক আয় নিয়ে। এখনই সৌদি আরব ও কুয়েত থেকে উদ্বেগজনক খবর আসছে, যেখানে শ্রমিকদের নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিত রাখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাবে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ের ওপর প্রচন্ড চাপ তৈরি করবে। ডলার সংকটে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে, শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে এবং বেকারত্ব আরও বেড়ে যাবে।
বিশ্বব্যাপী অস্ত্র শিল্পের বাজার ফুলে ফেঁপে উঠবে। আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন- এই দেশগুলো রীতিমতো যুদ্ধ ব্যবসায়ী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ যত চলবে, তত তাদের জিডিপি বাড়বে।
এই যুদ্ধের আরেকটি অশুভ প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্যে। জাতিসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ইতোমধ্যেই উঠেছে। এখন সেটি পরিণত হবে রীতিমতো কৌতুকের বিষয়। আন্তর্জাতিক আইন বলতে কিছু নেই, আছে কেবল বিজয়ীর খেয়াল। মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তাল পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত সব কনফ্লিক্ট নতুন মাত্রা পাবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ব এক অদৃশ্য ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’-এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে- যেখানে যুদ্ধক্ষেত্র সীমিত হলেও তার প্রভাব সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী। সবচেয়ে ভয়ংকর বাস্তবতা হচ্ছে, এই যুদ্ধ মুসলিম সমাজে চিরস্থায়ী বিভক্তি সৃষ্টি করবে। শিয়া-সুন্নি বিভেদ আরও প্রকট হবে, সহানুভূতির বদলে সন্দেহ জন্মাবে, উম্মাহ বলে আর কিছু থাকবে না। একেক দেশ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, অন্যদের ধ্বংস নিয়ে উল্লাস করবে। ইরানের ধ্বংস হবে শুধুই একটি দেশের পতন নয়– এটি মুসলিম পরিচয়ের সর্বশেষ প্রতিরোধের পতন।
তাই এখন সময় আত্মসমালোচনার। এখন সময় ইরানের জন্য কাঁদার পাশাপাশি নিজেদের জন্য কাজ করার। যারা এই যুদ্ধের উন্মাদনায় বিভোর তারা ভুলে যাচ্ছে, একদিন ধ্বংসের পালা সবারই আসবে। কেউ পালাতে পারবে না। আজ ইরান; কাল হয়তো আমি, আপনি, আমাদের সন্তান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের শহর। ইরান হয়তো হেরে যাবে। কিন্তু ইরানের পতন যেন মুসলিম বিশ্বের চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের প্রতীক না হয়- সেটাই আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে- ধর্মবিশ্বাস রেখে, যুক্তি ও জ্ঞানের সঙ্গে। নয়তো আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্ভাগা প্রজন্ম হিসেবে গণ্য হব- যারা আল্লাহর দেওয়া ‘ইকরা’র নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হয়েছিল এবং বিনিময়ে ধ্বংসকে আলিঙ্গন করেছিল।
জুন ২৩, ২০২৫
[email protected]
প্যানেল