
আইন-আদালতের তোয়াক্কা না করে, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে শাস্তি দেওয়াই মব। গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর, বাংলাদেশে মব অপসংস্কৃতি উত্থান সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে অন্তরায় হচ্ছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ মবের কারণে ম্লান হওয়ার পথে। সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। পৃথিবীর সব দেশেই মবসংস্কৃতি কমবেশি চলমান। সমাজের সভ্যতা ও ভদ্রতা ভেদে মবের আকার-আকৃতি ও প্রকৃতির তারতম্য হতে পারে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোয় মব ভায়োলেন্স প্রায় অভিন্ন ধারায় প্রচলিত। সাধারণত দেশের তরুণ সমাজ মব করে থাকে। কারণ অনুসন্ধানে মনঃস্তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন, যখন কোনো জনপদের নাগরিকরা মনে করেন যে, রাষ্ট্রীয় আইনি কাঠামো কোনো কাজ করে না, কিংবা আমজনতা মনে করছেন তা জনবিরোধী অথবা এই লোকেরা আইনি কাঠামোর ধার ধারে না, যখন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে দুর্বল বা অন্যায় বলে মনে করে তখনই মানুষ মব করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
সম্প্রতি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে তার উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও করার পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এই অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন সিইসি কিংবা রাষ্ট্রের যে কোনো পর্যায়ের একজন অতি সাধারণ নাগরিকও যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশের প্রচলিত আইন ও বিচারিক কাঠামো আছে, সে অনুযায়ী তার যথোপযুক্ত বিচার হবে। কিন্তু মব করে বয়োবৃদ্ধ একজন মানুষের গলায় জুতার মালা পরানো কোনো সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে না। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা যা কিছুই করিনা কেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দুনিয়াবাসী জাতি হিসেবে আমাদের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে থাকে।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে মব সংস্কৃতির জনক আওয়ামী বাকশালী ফ্যাসিবাদের প্রবক্তা শেখ মুজিব। গণতন্ত্রের মোড়কে এই ফ্যাসিস্ট, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫-এর মমধ্যবর্তী সময়কালে জাসদের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গুম ও খুন করে। ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে, শেখ মুজিবের নির্দেশে সিরাজ শিকদারের মতো প্রতিবাদী নেতাকে সাভারের তালবাগে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। মব সংস্কৃতির সেই ফ্যাসিবাদী ধারা শেখ হাসিনার হাত ধরে পূর্ণতা পায়। ইদানীং কোনো কোনো গণমাধ্যম মব নিয়ে মায়া কান্না করছে। মব নিয়ে আমরাও আতঙ্কিত। যখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনকালে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও দৈনিক সংগ্রামের বয়োবৃদ্ধ সম্পাদক আবুল আসাদ, এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ওপর হামলা হলো তখনো ফ্যাসিবাদের দোসর কিছু গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে এগুলো মব ছিল না। মব নিয়ে দ্বিচারিতা কারও পক্ষেই কাম্য নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান। গণপিটুনি, জোরপূর্বক পদত্যাগ করানোসহ নানা ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়েছে দেশের জনগণ। এসব ঘটনা বন্ধে ত্বরিত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। প্রয়োজনে টহল টিমের কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে।
প্যানেল