ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

শিশুকে ছোট ভাববেন না, তারও আছে সম্মানের অধিকার

ছামিয়া ইসলাম আঁখি

প্রকাশিত: ১০:১০, ২৫ জুন ২০২৫

শিশুকে ছোট ভাববেন না, তারও আছে সম্মানের অধিকার

ছবি: সংগৃহীত

সন্তান ছোট বলে অনেক সময় আমরা ধরে নিই, তাদের অনুভূতি, মতামত বা চাওয়া-পাওয়ার তেমন কোনো মূল্য নেই। বাস্তবে এই ধারণা পুরোপুরি ভুল এবং ক্ষতিকর। সাম্প্রতিক এক মনোবিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, শিশুকালেই প্রাপ্ত সম্মান একজন মানুষের আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক দক্ষতা তৈরিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৫০০-এর বেশি শিশুর পরিবার। গবেষণাটি পরিচালনা করে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য, আচরণগত প্রবণতা এবং পরিবারের আচরণগত ধারা পর্যবেক্ষণ করা হয় দীর্ঘ সময় ধরে।

 

 

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুকে তাদের ছোট বয়স থেকেই সম্মান করা হয়,  যেমন তাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া, কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং বিনয়ের সঙ্গে শাসন করা, তারা ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসী, সিদ্ধান্তগ্রহণে দক্ষ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়ে ওঠে। তারা অন্যদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করে এবং গড়ে তোলে ইতিবাচক সামাজিক সম্পর্ক।

অন্যদিকে, যেসব শিশু পরিবারে নিয়মিত অবহেলার শিকার হয়, যাদেরকে সবসময় “তুমি বোঝো না”, “চুপ করে থাকো”, কিংবা “তোমার কিছু বলার দরকার নেই” এমন কথা শুনতে হয়, তাদের মধ্যে জন্ম নেয় অপূর্ণতা, ভয় এবং একধরনের মানসিক সংকোচ। এই শিশুরা পরবর্তী জীবনে নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগে, যেমন, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, অতিরিক্ত রাগ বা অবদমন, এমনকি মানসিক অসুস্থতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন শিশুকে সম্মান করার অর্থ এই নয় যে তাকে সবকিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে বা প্রতিটি সিদ্ধান্তে তার মত চূড়ান্ত হবে। বরং, তার চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া, তাকে বোঝানো এবং একটি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল পরিবেশে বড় করে তোলার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে গড়ে তোলা যায় ইতিবাচক মনোভাব ও দায়িত্ববোধ। শিশু যদি দেখে তার কথা গুরুত্ব পাচ্ছে, সে নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং এটি তার আত্মমর্যাদাবোধ গঠনে সহায়ক হয়।

 

 

শিশু বয়সে সম্মান পাওয়ার অভিজ্ঞতা একটি শিশুর চিন্তাভাবনায় স্থায়ী ছাপ ফেলে। যে শিশু সম্মান পায়, সে ভবিষ্যতে অন্যদের সম্মান করতে শেখে। পরিবার, স্কুল ও সমাজে সে হয়ে ওঠে দায়িত্ববান, সহানুভূতিশীল এবং মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক। তাই সন্তান যতই ছোট হোক, তার সম্মান প্রাপ্য, এই মানসিকতা আমাদের অভিভাবকত্বের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে উঠতে হবে।

অতএব, সন্তানকে সম্মান করা কোনো বাড়তি সৌজন্য নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয় ও গভীরভাবে প্রভাববিস্তারকারী অভ্যাস, যা একটি সুস্থ ও মানবিক ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দেয়।

ছামিয়া

×