
ছবি: প্রতীকী
গুগলের ছোট ভুলে অচল হয়ে গেল ইন্টারনেটের বড় একটি অংশ। 'নাল চেক' না থাকায় ধসে পড়ে গুগল ক্লাউড, ব্যাহত হয় বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় অ্যাপস ও সার্ভিস। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকালে হঠাৎ করেই অচল হয়ে যায় গুগল ক্লাউডের অনেকগুলো সেবা। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই বিভ্রাটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার ওয়েবসাইট ও অ্যাপস।
বিভ্রান্তিতে পড়ে গুগলের নিজস্ব সেবা ছাড়াও Spotify, Discord, Snapchat, Character.AI-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ এবং ক্লাউডফ্লেয়ারের মতো প্রতিষ্ঠান। ব্যবহারকারীরা বহু সময় অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেননি, অনেক ওয়েবসাইটে ঢোকাও যায়নি।
গুগল পরে জানিয়েছে, এই সমস্যা শুরু হয় একটি ছোট্ট প্রোগ্রামিং ভুল থেকে—কোডে 'নাল চেক' না থাকা। সাধারণভাবে যেটি প্রোগ্রামিং শেখার শুরুর দিকেই শেখানো হয়, সেই ভুলই বিশাল আকার নেয়।
মূলত, গুগলের ‘Service Control’ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে নতুন একটি ফিচার চালু করা হয়। এই ফিচারের মাধ্যমে কোটা ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই কোড চালুর সময় কোনোরকম ‘ফিচার ফ্ল্যাগ’ ব্যবহার করা হয়নি। ফলে সেটি সরাসরি সক্রিয় হয়ে যায় সারা বিশ্বের সার্ভারে।
এই নতুন কোডে একটি গোপন ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুটির কারণে, যখন কেউ একটি নীতিমালার ফাইল আপলোড করে এবং সেখানে কিছু তথ্য ফাঁকা থাকে, তখন পুরো সার্ভিস কন্ট্রোল সিস্টেম হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় গুগলের নিজস্ব ডেটাবেস ‘Spanner’-এর কারণে। এই ডেটাবেস সেই ভুল তথ্য মুহূর্তেই পুরো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়। ফলে একসঙ্গে সব সার্ভার ভেঙে পড়ে।
এতে Spotify-তে গান শোনা বন্ধ হয়ে যায়, Discord-এ চ্যাট করা যায় না, Snapchat সাড়া দেয় না। Cloudflare-এর গুরুত্বপূর্ণ সেবা যেমন Gateway, Images, Workers AI বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি OpenAI-এর ChatGPT ও Amazon Web Services-এর কিছু অংশও ধাক্কা খায়।
গুগলের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তারা একটি ‘রেড বাটন’ ফিচার ব্যবহার করে ত্রুটিপূর্ণ কোড বন্ধ করে দেয়। কিছু অংশ ৪০ মিনিটের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে ‘us-central1’ নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঞ্চলে সমস্যা বেশি হয়। সেখানে সব সার্ভিস একসঙ্গে চালু হওয়ার চেষ্টা করে, যার ফলে রিকভারি করতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল গুগলের তথ্য জানানো নিয়ে। তাদের স্ট্যাটাস ড্যাশবোর্ডও গুগল ক্লাউডে হোস্ট করা ছিল। ফলে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবহারকারীরা তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর DownDetector-এর মতো প্ল্যাটফর্মে খোঁজ নিতে বাধ্য হন।
ঘটনার পর গুগল দুঃখ প্রকাশ করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় পরবর্তী সময়ে এই ধরনের ভুল যাতে না ঘটে, তার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। তারা বলেছে, কোডে নাল চেক নিশ্চিত করা হবে, ত্রুটিপূর্ণ ডেটা রেপ্লিকেশনের আগে পরীক্ষা করা হবে এবং নতুন ফিচার রিলিজে ফিচার ফ্ল্যাগ ব্যবহার করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি বড় শিক্ষা। আজকের দিনে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, একটি ছোট ভুল থেকেও বিশাল বিপর্যয় ঘটতে পারে। গুগলের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানও নিরাপদ নয়। এবং এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যখন একটি ক্লাউড সিস্টেমে সারা বিশ্বের নির্ভরতা তৈরি হয়, তখন একটি ভুল সবার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এম.কে.