ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

পায়রা বন্দর থেকে এ পর্যন্ত সরকারের আয় হয়েছে দুই হাজার ৭৯ কোটি টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৫৭, ২৫ জুন ২০২৫

পায়রা বন্দর থেকে এ পর্যন্ত সরকারের আয় হয়েছে দুই হাজার ৭৯ কোটি টাকা

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

পায়রা বন্দরের উন্নয়ন অগ্রগতি, সম্ভাবনা এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময় সভা আজ বুধবার বেলা ১১ টায় পায়রা পোর্ট ফার্স্ট টার্মিনাল ভবন মিলনায়তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন  পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পহেলা জুলাই থেকে পায়রা বন্দরের ফার্স্ট টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গভাবে, পুরোদমে চালু হবে । পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর জন্য প্রথম টার্মিনাল এজন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা রয়েছে ।

বন্দরের প্রথম জেটি ও জাহাজ হ্যান্ডলিং- এর প্রারম্ভিক সুযোগ সুবিধাদি নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। তিনি জানান, অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর ৫২৯ টি বৈদেশিক জাহাজ ও ৩৪২৬ টি দেশীয় লাইটারেজ নিরাপদে হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হয়েছে। এ থেকে সরকার ২০৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। এখন দ্রুত ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ছয়লেন সড়কের কাজ সরকার শুরু করবে বলে তিনি জানান। 


বন্দর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে সচল হওয়ার পরে বন্দর ও বন্দর নির্ভর যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যা দক্ষিণাঞ্চলের তুলনামূলক অনগ্রসর জনপদ কে সমৃদ্ধ করা তথা দেশের অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অবদান রাখবে। তিনি জানান, পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে এখানে শিল্পক্ষেত্রে বড় বিনিয়োগ হয়েছে, আরও বহু বিনিয়োগ অপেক্ষমাণ রয়েছে।  এই বৃহত্তর স্বার্থে বন্দরের অগ্রযাত্রায় তিনি সকলের সহায়তা করার আহ্বান জানান। 


উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বহির্নোঙরে পণ্যবাহী জাহাজ আসার মধ্য দিয়ে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া ফার্স্ট টার্মিনাল থেকে নির্মাণাধীন ছয় কিলোমিটারে ৩৫ মিটার দীর্ঘ ছয় লেন সড়ক ও এক দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সিক্সলেন সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী মার্চ মাসে সম্পন্ন হবে। এটি চালু হলে টার্মিনাল থেকে সরাসরি সড়ক পথে পণ্য পরিবহনে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পায়রা বন্দরের সদস্য ( হারবার এন্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন জামাল উদ্দিন চৌধুরী। পায়রা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক ভূমিকা নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন, পায়রা বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন)  কমডোর মোহাম্মদ আব্দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট সভাপতি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক মামুনুর রশীদ, মোংলা, পায়রা, পানগাও এবং ল্যান্ড পোর্ট পরিচালক সুমন হাওলাদার, বিজিএমইএর কো-চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্স সভাপতি কামাল হোসেন,  কলাপাড়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মো হুমায়ুন কবির, কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল মুকিম তালুকদার, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক জাকির হোসেন  প্রমুখ।

সুমন হাওলাদার বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সচেতনভাবে টেকসই পদক্ষেপ নিয়ে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। 
বক্তারা জানান,পায়রা বন্দর ফার্স্ট টার্মিনাল ব্যবহারে রয়েছে, আধুনিক ইক্যুইপমেন্ট সমৃদ্ধ ৬৫০ মিটার জেটি। তিন লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড সুবিধা। দশ হাজার বর্গমিটার আধুনিক সিএফএস সুবিধা, ১২৫-১৪০ মিটার প্রশস্ত এবং ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩২ মিটার প্রশস্ত প্যানামেক্স আকৃতির ৫০ হাজার মেট্রিকটনবাহী জাহাজ সরাসরি পণ্য খালাস সুবিধা। জটবিহীন বার্থিং/ আন-বার্থিং সুবিধা। নিরাপদ নেভিগেশন সুবিধা, ইনার চ্যানেলে একই সময়ে ১০-১৫টি বাণিজ্যিক জাহাজের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা থাকছে।  রয়েছে গাড়ি আমদানির জন্য সুপ্রশস্ত আধুনিক কার শেডসহ সাশ্রয়ী ট্যারিফ রেইট এবং টার্মিনাল ভবনে ঝামেলামুক্ত ও দ্রুততম সিঙ্গেল পয়েন্ট সার্ভিস সুবিধা রয়েছে এই টার্মিনাল ব্যবহারে।
এ মতবিনিময় সভাকে ঘিরে পায়রা সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন প্রবেশদ্বার, এগিয়ে চলো বাংলাদেশ দেখো আগামীর পায়রা সমুদ্র বন্দর- এমন স্লোগান সংবলিত ব্যানার দিয়ে  সজ্জিত ছিল  টার্মিনাল ভবন এলাকা। লালুয়ার রাবনাবাদ পাড়ে বিরাজ করে কোলাহল মুখর পরিবেশ। 


এসময় পায়রা বন্দরের বিভিন্ন অংশীজন আলোচনায় অংশ নেন। বক্তারা এও বলেন, শুধু মাত্র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ভিত্তিক জাহাজ নির্ভরতায় চলবে না। বন্দর ব্যবহারে দেশের বড় ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করতে হবে।  সর্বোপরি বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় পরিকল্পিত ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বন্দর ব্যবহারকারীরা আইন শৃঙ্খলা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়ায় প্রথম টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। 

সাব্বির

×