
সম্প্রতি বাংলাদেশ একযোগে ডেঙ্গু ও করোনার দ্বৈত আক্রমণের মুখোমুখি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যেখানে করোনার সংক্রমণও ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে। যদিও করোনার তুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বেশি, তবু দুটিই জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্কতা পদক্ষেপ এখন জরুরি। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। এ বছর জুনের প্রথম ১৫ দিন পর্যন্ত দেশে ৫,৯৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, বর্ষার শুরুতে থেমে থেমে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা এডিস মশার প্রজনন বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে বরগুনায় হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। অন্যদিকে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে, যা নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রমের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া জনসচেতনতার অভাবও এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। ডেঙ্গুর তুলনায় কম হলেও প্রতিদিনই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, যেখানে অর্ধেকের বেশিই ঢাকার বাসিন্দা। ফলে পরীক্ষার কিট ও টিকার সংকট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, ১৭ লাখ টিকার মেয়াদ আগস্টেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া জরুরি ভিত্তিতে শুরু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ভারতে নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট (এনবি.১.৮.১) ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশেও এর বিস্তার রোধে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। কিন্তু সরকারি প্রস্তুতি ও বাস্তবতার মধ্যে বড় ফারাক দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দাবি করছে, তারা ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত। তবে বাস্তবে হাসপাতালগুলোতে প্লাটিলেট কিট, ওষুধ ও শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। বরগুনার এক চিকিৎসকের ভাষ্য, ‘হাসপাতালে স্থান নেই, তাই শুধু জরুরি রোগীদেরই ভর্তি করা হচ্ছে।’ মশক নিধন কার্যক্রমও দুর্বল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, মশা নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে জলাবদ্ধতা দূর করতে হবে এবং নিয়মিত লার্ভিসাইড ছিটানো নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, করোনার টিকা ও পরীক্ষা বাড়ানো জরুরি। নতুন টিকা আমদানি ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে দ্রুত টিকা দেওয়া উচিত। তৃতীয়ত, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাড়ির আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া এবং করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যক। চতুর্থত, হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে প্লাটিলেট কিট, অক্সিজেন ও শয্যা সংকট দূর করতে হবে। ডেঙ্গু ও করোনার এই দ্বৈত সংকট মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় ও জনসচেতনতা অপরিহার্য। অন্যথায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও চাপে পড়বে এবং প্রাণহানির সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তাই সময় থাকতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ময়মনসিংহ থেকে
প্যানেল