ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যেও মসলা? জানুন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ২৫ জুন ২০২৫

স্বাদে নয়, স্বাস্থ্যেও মসলা? জানুন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

মরিচ, হলুদ, আদা—এই পরিচিত মসলা উপাদানগুলো শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতেই নয়, এখন অনেকেই এগুলোকে "সুপারফুড" বা অলৌকিক স্বাস্থ্যউপকারী উপাদান হিসেবে প্রচার করছেন। কেউ বলেন এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কেউ বলেন ক্যানসার বা হৃদরোগ ঠেকাতে সহায়ক। কিন্তু আদৌ কি মসলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?

মরিচের সম্ভাব্য উপকারিতা

চিলি মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন নামক যৌগটি শরীরে তাপমাত্রা অনুধাবনকারী রিসেপ্টরের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে মস্তিষ্কে উত্তাপের সংকেত পাঠায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মরিচ খাওয়া মানুষের মৃত্যুঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে।

২০১৯ সালে ইতালিতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মানুষ সপ্তাহে চারবার মরিচযুক্ত খাবার খান, তাদের মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। চীনে ৫ লক্ষাধিক প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা আরেক গবেষণাতেও মরিচ খাওয়ার সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকি হ্রাসের সম্পর্ক পাওয়া যায়। তবে এই উপকারিতা তাৎক্ষণিক নয়, বরং দীর্ঘ সময়ে গড়ে ওঠে।

মরিচ রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, প্রদাহ কমানো এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করতে পারে বলে মত দেন গবেষকরা। তবে এক গবেষণায় অতিরিক্ত মরিচ খাওয়ার সঙ্গে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে।

হলুদের বাস্তবতা

হলুদের মূল কার্যকর উপাদান কারকিউমিন, যা পরীক্ষাগারে প্রদাহ এবং ক্যানসার কোষ দমনে কার্যকর দেখা গেছে। তবে মানুষের শরীরে এই উপাদানটির জৈব উপলব্ধতা (bioavailability) খুবই কম, অর্থাৎ শরীর এটি সহজে শোষণ বা কাজে লাগাতে পারে না।

গবেষকরা বলছেন, রান্নার সময় হলুদ উত্তাপে পরিবর্তিত হয়, এবং অন্য উপাদানের সঙ্গে মিশে এর প্রকৃতি পাল্টে যায়। তাই স্বাভাবিক খাবারে ব্যবহৃত হলুদ থেকে উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাগত উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কারো জন্য ক্ষতিকরও নয়।

প্রকৃত উপকার কোথায়?

গবেষকরা মনে করেন, মসলা সরাসরি নয়, বরং যে খাবারের সঙ্গে মিশে আমরা মসলা খাই, সেগুলোর মাধ্যমে উপকার হতে পারে। যেমন মরিচ বা হলুদ সাধারণত সবজি বা ডাল-চালভিত্তিক স্বাস্থ্যকর খাবারে ব্যবহৃত হয়।

মসলা ব্যবহারের আরেকটি বড় সুবিধা হলো, এটি লবণ বা অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত উপাদানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে—যা স্বাস্থ্যকর খাওয়া নিশ্চিত করে।

মাংসে মসলা ব্যবহার করার ফলে তা কিছুটা কম ক্ষতিকর হয়ে ওঠে, কারণ মসলার সংরক্ষণ গুণাগুণ ব্যাকটেরিয়া বা ফ্রি র‌্যাডিকেল গঠনে বাধা দেয়।

মসলা খেলে স্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে ঠিকই, তবে তা অনেকটাই নির্ভর করে সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার উপর। মরিচ বা হলুদ কোনো ম্যাজিকাল উপাদান নয়, যা রোগ ঠেকাতে বা নিরাময় করতে পারে।

সঠিক পরিমাণে, সঠিক খাবারের সঙ্গে মসলা ব্যবহার স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস হতে পারে। তবে একে ওষুধ বা রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হিসেবে ভাবা ঠিক হবে না।

Jahan

×