ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

লিভারের চর্বি ধরা পড়ে না বাইরের ওজন দেখে: পাতলা শরীরেও NAFLD হতে পারে!

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪৫, ২৫ জুন ২০২৫

লিভারের চর্বি ধরা পড়ে না বাইরের ওজন দেখে: পাতলা শরীরেও NAFLD হতে পারে!

ছবিঃ সংগৃহীত

দেখে মনে হতে পারে কেউ সম্পূর্ণ সুস্থ ও ফিট, কিন্তু শরীরের ভিতরে লিভারে চর্বির অতিরিক্ত জমা হতে পারে। এই অবস্থা হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD), যা বর্তমানে মেটাবলিক ডিসফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়াটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD) নামে পরিচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি স্থূল ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, কিন্তু পাতলা ও স্বাভাবিক ওজনের মানুষদের মধ্যেও এই রোগ পাওয়া যায়, যা অনেক সময় অবহেলা হয়।

NAFLD কী এবং পাতলা শরীরের মানুষের ক্ষেত্রে এটি কেমন?

NAFLD হল এমন এক অবস্থা যেখানে অ্যালকোহল ছাড়াই লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়। সাধারণত এটি স্থূলতা ও মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যার মধ্যে উচ্চ BMI, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ডাইসলিপিডেমিয়া থাকে। তবে, সমীক্ষায় দেখা গেছে ১০-২০ শতাংশ NAFLD রোগী পাতলা ওজনের (এশিয়ানদের ক্ষেত্রে BMI<২৩, ককেশিয়ানদের ক্ষেত্রে BMI<২৫)।

এই 'বাহ্যিকভাবে পাতলা কিন্তু ভেতরে ফ্যাটযুক্ত' অবস্থা বিশ্বজুড়ে ৫ থেকে ২৬ শতাংশ মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এই হার ২৫ শতাংশের কাছাকাছি।

পাতলা শরীরেও NAFLD কেন হয়?

  • ভিসেরাল ফ্যাট ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: পাতলা শরীরেও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের চারপাশে (ভিসেরাল) চর্বি জমা থাকতে পারে, যা ত্বকের নিচের চর্বির থেকে বেশি ক্ষতিকর। তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রদর্শন করতে পারে, যা লিভারে চর্বি জমার মূল কারণ।

  • স্যারকোপেনিয়া ও চর্বির পুনর্বিন্যাস: পাতলা NAFLD রোগীদের অনেকেরই মাংসপেশি কম থাকে (স্যারকোপেনিয়া) এবং ভিসেরাল ফ্যাট বেশি, যা বিপাক ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

  • জেনেটিকস ও পরিবেশ: PNPLA3, TM6SF2 মত জিনে বৈচিত্র্য ও ফ্রুকটোজ, কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্য, কম শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, দূষণ, এবং মাইক্রোবায়োম পরিবর্তন NAFLD ঝুঁকি বাড়ায়।

কী লক্ষণ নজর রাখতে হবে?

পাতলা NAFLD প্রায়ই লক্ষণবিহীন থাকে এবং ইমেজিং বা লিভার এনজাইম বৃদ্ধির মাধ্যমে অনায়াসে ধরা পড়ে। লক্ষণ হলে হয়তো ক্লান্তি, শক্তিহীনতা, ডানপাশের উপরের পেটে হালকা ব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। রুটিন রক্তপরীক্ষায় ALT, AST বা GGT এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে গলায় বা বগলে কালো দাগ (অ্যাকান্তোসিস নিগ্রিকান্স) বা চোখের পাতা ও কাছে কোলেস্টেরলের জমা (জ্যান্থেলাজমা) দেখা যেতে পারে।

রোগের অগ্রগতি হলে (স্টিয়াটো হেপাটাইটিস বা ফাইব্রোসিস) তীব্র পেট ব্যথা, ক্লান্তির বৃদ্ধি, এবং প্রদাহের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যদিও এরা প্রায়শই নীরব থাকে।

রোগের গুরত্ব কেমন?

পাতলা NAFLD রোগীরাও স্থূলদের মতই গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। লিভারে প্রদাহ এবং ফাইব্রোসিস একই রকম হতে পারে। অনেক সময় পাতলা রোগীরা দেরিতে ধরা পড়ে এবং তাদের লিভার এনজাইম বেশি দেখা যায়। এদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

পাতলা এবং সুস্থ মনে হলেও কী করতে হবে?

  • সতর্ক থাকুন: ক্লান্তি, পেটে অস্বস্তি বা লিভার এনজাইম বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। শুধুমাত্র BMI দেখে ভুল করা যাবে না।

  • নির্ণয়ের উপায়: রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি আলট্রাসাউন্ড, ফাইব্রোস্ক্যান বা অন্যান্য অ-আক্রমণাত্মক পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় নিশ্চিত করুন।

  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন: ওজন কমানো না হলেও, মেটাবলিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিন। মেদ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে মেডিটারেনিয়ান ডায়েট, যা উদ্ভিজ্জ তেল, কম চিনি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ। নিয়মিত কার্ডিও ও স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করুন, যা ভিসেরাল ফ্যাট কমাতে ও মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করবে।

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: লিভারের অবস্থা পর্যবেক্ষণে নিয়মিত চেকআপ করুন।

পাতলা শরীর মানেই স্বাস্থ্যবান নয়, শরীরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে ফ্যাটি লিভারের মতো গুরুতর রোগ। তাই নিজের শরীরের অবস্থা বুঝতে সচেতন থাকুন।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/fatty-liver-in-fit-people-can-you-be-thin-and-still-have-nafld-key-symptoms-inside/articleshow/122062625.cms

ইমরান

×