ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

রান্নাঘরের যে ৫টি জিনিস প্রতিদিন ক্ষতি করছে আপনার শরীরের!

প্রকাশিত: ০১:১৪, ২৬ জুন ২০২৫

রান্নাঘরের যে ৫টি জিনিস প্রতিদিন ক্ষতি করছে আপনার শরীরের!

আমরা প্রায়ই ভেবে নিই যে শুধু প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ভেজাল উপাদানই স্বাস্থ্যের ক্ষতির জন্য দায়ী। কিন্তু আমাদের রান্নাঘরের প্রতিদিনের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রীও হতে পারে নীরব বিষ।

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ড. অলোক চোপড়া। তিনি লিখেছেন, “আপনার রান্নাঘর কি সত্যিই নিরাপদ? প্রতিদিন ব্যবহার করা এই ৫টি জিনিস হয়তো আপনার অজান্তেই ক্ষতি করছে। ভাবুন, আপনি কী দিয়ে রান্না করছেন, শুধু কী রান্না করছেন তা নয়।”

চলুন জেনে নিই সেই ৫টি রান্নাঘরের উপকরণ এবং তাদের স্বাস্থ্যকর বিকল্প কী হতে পারে।

নন-স্টিক ফ্রাইপ্যান
ড. অলোক চোপড়ার মতে, নন-স্টিক প্যান অতিরিক্ত গরম হলে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়তে পারে, এবং যদি প্যানের গায়ে স্ক্র্যাচ থাকে, তবে সেখান থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবারে মিশে যেতে পারে। পুরোনো নন-স্টিক প্যানে থাকা PFOA ও PFAS জাতীয় রাসায়নিক শরীরে জমে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: স্টেইনলেস স্টিল, কাস্ট আয়রন, সিরামিক বা গ্লাস কুকওয়্যার ব্যবহার করুন। ক্ষতিগ্রস্ত বা অতিরিক্ত গরম প্যান ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
অ্যাসিডিক খাবার রান্না বা উচ্চ তাপে ব্যবহার করলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল থেকে ধাতব উপাদান খাবারে মিশে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে তা স্নায়ুবিক সমস্যা বা অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাছাড়া এটি পরিবেশবান্ধবও নয়।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: বেকিংয়ে পার্চমেন্ট পেপার ব্যবহার করুন, আর খাবার গরম করতে বা সংরক্ষণের জন্য গ্লাস বা সিলিকনের কনটেইনার ব্যবহার করুন।

প্লাস্টিকের খাবার রাখার পাত্র
বিশেষ করে পুরনো বা নিম্নমানের প্লাস্টিকের কনটেইনার তাপে গরম হলে BPA, BPS ও ফথ্যালেটস-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে, যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস করে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। কালো রঙের প্লাস্টিক অনেক সময় ইলেকট্রনিক বর্জ্য থেকে তৈরি হয়, যা আরও বিষাক্ত।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: গ্লাস, সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে খাবার সংরক্ষণ করুন। এমনকি ‘মাইক্রোওয়েভ-সেইফ’ প্লাস্টিক হলেও সেটি গরম করা থেকে বিরত থাকুন।

প্লাস্টিক রান্নার চামচ বা স্প্যাচুলা
প্লাস্টিকের চামচ বা স্প্যাচুলা গরম পাত্রে ব্যবহারের সময় তার থেকে ফ্লেম রিটার্ডেন্ট, ডাই এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে প্রদাহ ও বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: কাঠ, বাঁশ বা স্টেইনলেস স্টিলের রান্নার চামচ ব্যবহার করুন। এগুলো শুধু নিরাপদই নয়, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধবও।

গ্যাস স্টোভ
ড. অলোকের মতে, গ্যাস স্টোভ থেকে বের হওয়া বেনজিন, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইডের মতো গ্যাস ঘরের বাতাসে মিশে গিয়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের সংক্রমণ এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে যেসব বাড়িতে ভালোভাবে বায়ুচলাচল হয় না, সেখানে শিশুরা ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

স্বাস্থ্যকর বিকল্প: ইন্ডাকশন বা ইলেকট্রিক কুকটপ ব্যবহার করুন। অন্ততপক্ষে রান্নাঘরে জানালা খুলে রাখুন, এক্সহস্ট ফ্যান বা চিমনি লাগান এবং প্রয়োজনে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।

রান্নাঘরকে নিরাপদ রাখা শুধু ভেজালমুক্ত উপাদান ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ নয়। কী দিয়ে রান্না করছেন, তাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর উপকরণ বেছে নিলে তবেই আপনার রান্নাঘর হতে পারে সুস্থ জীবনের উৎস। এখনই সময় আপনার রান্নাঘরের প্রতিদিনের ব্যবহৃত জিনিসগুলো নতুন করে ভাবার।


সূত্র:https://tinyurl.com/yabys22r

আফরোজা

×