
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংকের সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ফান্ড যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২২.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। সোমবার পর্যন্ত দেশের বিপিএম-৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ছিল ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেট সহায়তা হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স মোটামুটি ভালো হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।
বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। রিজার্ভ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরও সহজতর হবে। শুধু তাই নয়, রিজার্ভ এভাবে বাড়তে থাকলে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৭ কোটি ডলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছেও অর্থ মিলেছে। অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহের গতি কম। বাজেট সহায়তা আসার কারণে রিজার্ভ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রপ্তানিটা এখন মোটামুটি ভালো। রেমিটেন্স আসছে ভালো।
সৌদি আরবে গিয়ে জানলাম, সাধারণ নাগরিকেরা আমরা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আসছি বলেই টাকা পাঠাচ্ছেন। আগে তারা টাকা পাঠাতে স্বস্তি পেতেন না। টাকা পাঠালে কোথায় যায়, কী হয়, এগুলো নিয়ে তাদের অস্বস্তি ছিল। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। রাজনীতি হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে ইলেকশনটা কখন হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের আস্থা আরও বেশি কীভাবে আনা যায় আমরা দেখব। ব্যবসায়ীদের মোটামুটি আস্থা আছে। আমরা যখন বিনিময় হার উন্মুক্ত করি (ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া) তখন আমাদের অনেক টেনশন ছিল, হঠাৎ কী হয়। পাকিস্তানের মতো হয়ে গেল তো আমাদের জন্য বিপদ। সেটা হয়নি।
এনবিআরের আন্দোলনে কিছু ব্যবসায়ীর ইন্ধন ও এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের সময়কার সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমি আগে বলেছি এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ারের কোনো সমস্যা হবে না। একটা স্বতন্ত্র ডিভিশন হবে। তাদের ক্যারিয়ারটা আরও ভালো হবে, পদোন্নতির বিষয়টি আরও ভালো হবে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনবিআর আমরা সংস্কার করেছি কেন ? এনবিআরের ভেতরে আগে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল। আগের সরকারের সময় কিছু ব্যবসায়ী এটার সুবিধা নিয়েছে। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, হরমুজ প্রণালির কারণে কোনো প্রভাব পড়েনি। যুদ্ধের ভেতরেও জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয় হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পুনরায় দরপত্র করে ৫ থেকে ১০ ডলার কম পেয়েছি। সেখানে প্রায় ৭০ কোটি থেকে ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাফল্য।
মরক্কো, তিউনিসিয়ার সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখানে কোনো উপায় ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে ১.৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুমোদন করেছে, যা আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে রিজার্ভে যোগ হবে। তখন রিজার্ভ আরও বেড়ে যাবে। এর আগে গত মে মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, আইএমএফসহ একাধিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী জুন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার পাবে।
তিনি আরও বলেছিলেন, আইএমএফ ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এএইএইবি) থেকে এ অর্থ আসবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এদিকে বিদেশি সংস্থার ঋণ ছাড়াও দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ ভালো থাকায় রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে। উল্লেখ্য, গত মে মাস বাংলাদেশে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।