
দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল সেনা শাসন জারির চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তারের মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত বুধবার আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিশেষ কৌঁসুলির দপ্তরের করা এই আবেদন নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের পর ইউন আপাতত মুক্ত, তবে তদন্ত এখনো বন্ধ হয়নি।
এর আগে মঙ্গলবার, সেনা শাসন জারির ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে ঘিরে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয় বিশেষ কৌঁসুলির দল। অভিযোগ ছিল, জিজ্ঞাসাবাদের সমন পাঠানো হলেও ইউন তা এড়িয়ে গেছেন।
তবে ইউনের আইনজীবীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। তাঁদের মতে, “তাঁকে এমন কিছু গৌণ ও সন্দেহজনক ইস্যুতে টেনে আনা হচ্ছে, যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। এতে স্পষ্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসার গন্ধ পাওয়া যায়।”
তবে আইনি দল জানিয়েছে, ইউন আগামী শনিবার তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হবেন এবং সব প্রশ্নের জবাব দেবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, নির্ধারিত দিনে ইউন হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে ফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তিনি বাধা দেন। পরে তাঁকে আটক করা হয়, তবে ৫২ দিন পর কারিগরি কারণে মুক্তি পান। বর্তমানে তিনি সেনা শাসন জারির নির্দেশ দিয়ে ‘বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে বিচারাধীন, যা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।
তবে ইউন বারবার দাবি করে আসছেন, ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর তাঁর সেনা শাসনের ঘোষণা ছিল “গণতন্ত্রের সুরক্ষায় একটি সতর্কবার্তা”। তিনি বলেন, তৎকালীন বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনৈতিক আধিপত্য ছিল দেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।
এই পুরো তদন্তকে ঘিরে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনও বেশ উত্তপ্ত। প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং জুনে দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিশেষ কৌঁসুলিকে নিয়োগ দেন, যিনি ইউনের বিরুদ্ধে পুরোনো তদন্তগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখতে ২০০ জনের বেশি কৌঁসুলি ও তদন্তকারী নিয়ে একটি বিশাল দল গঠন করেছেন।
এদিকে, একই মামলায় সেনা শাসনের পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউনের আটকাদেশ বাড়ানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। কিম বর্তমানে জেলে রয়েছেন এবং তিনিও নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এই ঘটনা এক নতুন মোড় নিয়েছে। অনেকেই বলছেন, সামরিক হস্তক্ষেপ বা সংবিধানবিরোধী চেষ্টার বিরুদ্ধে যে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক বার্তা। তবে ইউন সুক ইয়লের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
আফরোজা