
ছবি: প্রতীকী
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা, ট্র্যাফিকের ধুলো, অফিসের দুশ্চিন্তা কিংবা জীবনের নানা জটিলতা— সব মিলে একটা সময় মনে হয়, আর যেন পারা যায় না। এই শহরের কোলাহল, সময়ের অভাব আর নিজের ওপর চাপের ভার আমাদের প্রতিনিয়ত ক্লান্ত করে তোলে।
দিনের শেষে বাসায় ফেরার পর কারো সঙ্গে কথা বলার শক্তিটুকুও যেন অবশিষ্ট থাকে না। তখন এমন কিছু চাই, যা মনকে একটু শান্তি দেবে, হৃদয়কে একটু উষ্ণতা দেবে, যেন সব ক্লান্তি গলে গিয়ে হাওয়া হয়ে যায়।
এমন এক সময়ে সন্তানের কচি কণ্ঠে ‘মা’, ‘বাবা’ ডাক শোনা কিংবা ছোট্ট হাত দুটি বাড়িয়ে আলিঙ্গনের আহ্বান জানানোই হয়ে ওঠে সেই জাদুকরি মুহূর্ত। যখন সন্তান দুহাতে আপনাকে জড়িয়ে ধরে, সেই মুহূর্তে যেন পৃথিবীর সব উত্তাপ শান্ত হয়ে আসে। শরীর আর মন দুটোই হালকা লাগতে শুরু করে। এ এক গভীর শান্তি, যা কোনো ওষুধে, কোনো অবকাশ যাপনে বা কোনো বিশ্রামেও পাওয়া যায় না।
গবেষণা বলছে, এই জড়িয়ে ধরার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানসিক প্রশান্তির এক অসাধারণ উপায়। আলিঙ্গনের সময় শরীরে অক্সিটোসিন নামে এক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মানসিক চাপ কমায়, উদ্বেগ প্রশমিত করে এবং হৃদয়ে এক ধরনের সুখানুভূতির সৃষ্টি করে।
সন্তান যখন এই ভালোবাসা দেয়, তা হয় নিঃস্বার্থ, নির্ভেজাল। তাদের ভালোবাসায় কোনো শর্ত নেই, কোনো প্রত্যাশাও নেই। তাই তাদের দেওয়া একটি জড়িয়ে ধরা হয় জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
শুধু বাবা-মায়ের ক্লান্তি দূর হয় তা-ই নয়, সন্তানদের জন্যও এটি এক ধরনের মানসিক পুষ্টি। প্রতিদিন যদি তারা এই নিরাপত্তা, এই স্পর্শ আর ভালোবাসার পরশ পায়, তবে তারা বড় হয় আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল এবং স্থির মানসিকতা নিয়ে। তারা বোঝে সম্পর্কের মানে, ভালোবাসার ভাষা, আর শিখে কিভাবে জীবনে কোমলতা নিয়ে চলতে হয়।
আজকের দিনে আমরা সবাই খুব ব্যস্ত। সময় যেন প্রতিনিয়ত আমাদের হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে। কিন্তু এই সময়ের ভিড়েও যদি প্রতিদিন অন্তত দু’মিনিট সন্তানকে জড়িয়ে ধরা যায়, তাতেই বদলে যেতে পারে একটি পরিবারের মানসিক পরিবেশ। ঘরে ফিরে আর কোনো শব্দ না বলেও যদি বুকের মধ্যে সন্তানকে শক্ত করে ধরা যায়, তাহলে সে অনুভব করে তাকে ভালোবাসা হচ্ছে, সে গুরুত্বপূর্ণ, সে নিরাপদ।
একটি আলিঙ্গন কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারে না, কিন্তু সেটি অনেক সমস্যার ভার হালকা করে দিতে পারে। এই পৃথিবীতে সন্তানের কোমল হাতের ছোঁয়া আর ভালোবাসায় ভরা একটি জড়িয়ে ধরা যদি আমাদের একটু ভালো থাকতে সাহায্য করে, তবে সে সুযোগ কেন নেব না? সন্তানের এই দু’মিনিটের ভালোবাসাই হতে পারে দিনের সবচেয়ে প্রশান্তিময় মুহূর্ত, যেখানে ক্লান্তি গলে যায় ভালোবাসার উষ্ণতায়।
এম.কে.