ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

পলাশির প্রান্তরে ২৩ শে জুন: হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার সূর্য

আব্দুন নুর আজাদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩২, ২৩ জুন ২০২৫

পলাশির প্রান্তরে ২৩ শে জুন: হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার সূর্য

ছবিঃ সংগৃহীত

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। মুর্শিদাবাদের পলাশির প্রান্তরে বাংলার ইতিহাসে রচিত হয় এক বিশ্বাসঘাতকতার অনন্য কাব্য। সে দিন কেবল একটি যুদ্ধ হয়নি—পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী জনপদের পতনের সূচনা হয়।

বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন কেবল একজন শাসক নন, তিনি ছিলেন বাংলার প্রতিরোধের প্রতীক। অথচ পলাশির যুদ্ধের মঞ্চে তাঁকে একা করে ফেলা হয়েছিল তাঁরই সেনাপতি মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়। যুদ্ধের মাঠে যখন গোলাবারুদ ঝরছিল, তখন পেছন থেকে চক্রান্তের ছুরি গভীরভাবে বিঁধছিল বাংলার হৃদয়ে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল লুটপাট—ব্যবসা নয়, সাম্রাজ্য গঠন। আর পলাশিই ছিল সেই সাম্রাজ্যের প্রথম ইট। এ যুদ্ধ হারায়নি কেবল সিরাজউদ্দৌলা, হেরেছে বাংলা, ভারতবর্ষ, উপমহাদেশের সমস্ত শোষিত মানবতা।

২৩ জুন প্রতিবার ফিরে আসে, তবে ইতিহাসের এই কালো দিনকে আমরা কীভাবে স্মরণ করি? পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে আমাদের মননে কি এই যুদ্ধের যথার্থ ব্যাখ্যা পৌঁছায়? আমরা কি প্রশ্ন করি—মীর জাফরের উত্তরসূরি রূপে আজও কেউ বাংলার ভেতরে লুকিয়ে আছে কিনা?

বিশ্বাসঘাতকতা, গোপন চুক্তি, রাজনীতি—এই তিনে গড়া পলাশির যুদ্ধ আমাদের একটি বড় শিক্ষা দেয়:

জাতির শত্রু অনেক সময় বাইরের নয়, ভেতরের।
এক মুহূর্তের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত কত শতাব্দীর পরাধীনতা ডেকে আনতে পারে।
ইতিহাসের বিকৃতি আমাদের ভবিষ্যৎকেও গিলে ফেলতে পারে।

আজ ২৩ জুন। আমরা স্মরণ করি পলাশির যুদ্ধকে, কিন্তু কেবল স্মরণ নয়—জাগরণ প্রয়োজন। প্রয়োজন নতুন প্রজন্মকে এই যুদ্ধের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া, যাতে তারা চিনে ফেলে নতুন যুগের 'মীর জাফরদের'।

পলাশির যুদ্ধ শেষ হয়নি—আজও তা চলছে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, এমনকি সংস্কৃতির ভিতরেও।

আলীম

×