ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

উন্নত সমাজ, অবনত মূল্যবোধ

মাহজাবীন তাসনীম রুহী

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ২১ জুন ২০২৫

উন্নত সমাজ, অবনত মূল্যবোধ

ছবি: সংগৃহীত

মানুষ সভ্যতার ইতিহাসে কখনো এত গতিশীল, এত তথ্য-নির্ভর, এত প্রযুক্তি-নির্ভর ছিল না। ডিজিটাল বিপ্লব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আগ্রাসন ও স্মার্ট নগরের জালে আমরা বন্দি নই, বরং স্বেচ্ছায় মগ্ন। পৃথিবী এখন ক্লিকের দূরত্বে, আর মানুষ অদ্ভুতভাবে হয়ে উঠছে একা।


এই প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নয়নযাত্রা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে সহজতা, গতি, সুযোগ। কিন্তু যে জিনিসগুলো নিঃশব্দে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আরও মূল্যবান সহানুভূতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নৈতিকতা আর মানবিক স্পর্শ।
আজ মানুষ যতটা না তার অন্তর্গত সত্তা নিয়ে বাঁচছে, তার চেয়ে বেশি বাঁচছে সোশ্যাল মিডিয়ার সাজানো এক ভার্চুয়াল স্বত্বায়। ছবির পেছনে ক্লান্ত মুখ, ক্যাপশনের নিচে অব্যক্ত কান্না, আর লাইকের ভিড়ে নিঃসঙ্গ হৃদয় এসব বাস্তবতাই এখন আমাদের সমাজচিত্র।


শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল, যেন সেটিই নতুন বয়সের বন্ধু। খেলাধুলার মাঠ শূন্য, গল্পের সন্ধ্যা নিঃশব্দ। তরুণদের ‘স্ক্রিন টাইম’ বাড়ছে, অথচ পরিবারের সাথে কথোপকথন সীমিত হয়ে আসছে রোবটিক আদান-প্রদানে। প্রবীণরা পড়ে আছেন নিঃসঙ্গতার ছায়ায়, যাদের সময় দেওয়ার মতো সময় নেই কারো।


মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সবচাইতে নির্মম প্রতিফলন ফুটে ওঠে যখন আমরা দেখি, সমাজে সহিংসতা বাড়ছে, সহানুভূতি কমছে। আত্মকেন্দ্রিকতা যেন নতুন নিয়ম, আর বিবেক সেটা যেন এখন অলংকারমাত্র।তবে এই অন্ধকারে কিছু আশার আলোও জ্বলে ওঠে। কিছু পরিবার, কিছু শিক্ষক, কিছু তরুণ এখনো আছেন যারা মানবিকতা নিয়ে কাজ করেন, মূল্যবোধ রক্ষার চেষ্টা করেন নিরবে, নিঃস্বার্থে।


প্রশ্ন উঠছেই এই প্রযুক্তিবিশ্বে আমরা মানুষ হয়ে থাকতে পারব তো? আমরা চাই উন্নয়ন, কিন্তু সেটা এমন হোক যেখানে হৃদয় পিছিয়ে না পড়ে। যেখানে উঁচু দালানের নিচে বসে থাকা মানুষটার চোখেও সম্মান থাকে, সহানুভূতির আলো থাকে।


সমাজ তখনই প্রকৃত অর্থে উন্নত হয়, যখন তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষ, আর মানুষত্ব। প্রযুক্তি হোক সহায়ক নিয়ন্ত্রক নয়।এখন প্রয়োজন নতুন এক চেতনার যেখানে শিক্ষা হবে মূল্যবোধনির্ভর, পরিবার হবে ভালোবাসার কেন্দ্র, সমাজ হবে সহানুভূতির জায়গা। নইলে, আমরা উন্নয়নের নামে গড়ে তুলব এক শীতল ও নীরস পৃথিবী যেখানে দালান থাকবে, প্রযুক্তি থাকবে, কিন্তু হৃদয় থাকবে না।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১ম বর্ষ, এমসি কলেজ, সিলেট।

শিহাব

×